এমএফআর ফারুক, বগুড়া ব্যুরো : ফরিদুল কৌশলে বসতবাড়ি ও ছোনকা বাজারের পাশে কিছু জমি লিখে নেন মা বোনদের কাছে থেকে, ফলে অন্য ভাইদের সঙ্গে তার শত্রুতা শুরু হয়। অন্যদিকে সৎ শ্যালক ওমর ফারুকের কাছ থেকে বন্ধকী জমির তিন লাখ টাকা পাওয়া নিয়েও একটি দ্বন্দ্ব ছিল তার। দুই দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন ফরিদুল বলে পুলিশ জানায়। হত্যা পরিকল্পনায় ছিলেন আপন ভাই ও শ্যালক।
একমাত্র ছেলে ইয়ানুর রহমান শাওনকে (১০) গত ঈদুল আজহার পর থেকে পড়াশোনার জন্য ঢাকার সাভারে তার মেয়ের বাড়িতে রাখেন ফরিদুল। বাড়িতে তিনি সহ স্ত্রী থাকতেন, কিন্তু স্ত্রী ইসমতআরা আবার ননদকে নিয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকায় থাকায় তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছুটা সুবিধা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন গত ৫ তারিখে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভাতিজা ফারুক আহম্মেদ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো চাকুসহ ভিকটিমের বাসায় প্রবেশ করে অন্ধকার স্থানে লুকিয়ে থাকে। সারাদিন জমিতে কাজ শেষে বাসায় প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই ভাতিজা তার মাথার পেছনে চাকু দিয়ে আঘাত করে। সঙ্গে যুক্তরাও তাকে বটি ও চাকু দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। হত্যাকান্ডের পরদিন স্ত্রী ইসমতআরা অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে শেরপুর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও শ্যালক স্বাভাবিক না থাকতে পেরে নিজে নিজেই একটি অপহরণ নাটক সাজান। যে নাটকের সূত্র পুলিশকে হত্যাকান্ডের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে জড়িতদের কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করে।
বুধবার বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের প্রেস কনফারেন্স রুমে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূঞা।
জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর থানাধীন ইটালি মধ্যপাড়া গ্রামে জমি ও টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে ফরিদুল (৪৮) হত্যাকান্ডে জড়িত ৫ জনকে, ঘটনার ৭ দিনের মাথায় গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ তাদের সম্পৃক্ততার কথা জানতে পারে। শ্যালক ওমর ফারুক গত মঙ্গলবার ঘটনার ৭ দিনের মাথায় প্রথমে গ্রেফতার হন পুলিশের হাতে মানিকগঞ্জে। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজের নাম সহ জড়িত সবার নাম স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গতকাল বুধবার অন্য ৪ জনকে ইটালি মধ্যেপাড়ার নিজ নিজ বাড়ি হতে গ্রেফতার করে। তাদের সবাই আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়। জড়িতদের মধ্যে ছিলেন- সৎ শ্যালক ওমর ফারুক (৩৫), ভাতিজা ফারুক আহম্মেদ (৩০), ছোটভাই জিয়াউর রহমান জিয়া (৪০), স্ত্রী (ভাইবউ) শাপলা খাতুন (৩৫), ও চাচা আব্দুর রাজ্জাক। গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার সময় নিজ বাড়িতে নিজ আত্মীয়-স্বজন দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডে শিকার হন ইটালি মধ্যেপাড়া গ্রামের মৃত কেয়ামত আলীর ছেলে রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম। সে ব্যবসার পাশাপাশি কৃষকও ছিলেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল শেরপুর ছোনকা বাজারে।