নেওয়াজ মোর্শেদ নোমান, জয়পুরহাট থেকে
ইউরোপের মাটিতে ইমোশন টু জেনারেট চেঞ্জ শিরোনামে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী আসফ উদ দৌলার একক ৪০টি ছবি প্রদর্শনী করা হয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে (ভ্যাটিকান সিটি) ইমোশন টু জেনারেট চেঞ্জ শিরোনামে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। ব্যাসিলিকার বাম উপনিবেশের অধীনে প্রদর্শনী ৩১ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
প্রদর্শনির কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করছেব ইতালির ফিল্ম ডিরেক্টর ও লেখক লিয়া বেলত্রামি। আসাফ এর অনুপস্থিতিতে তিনি প্রদর্শনীর সকল দায়িত্ব বহন করছেন। প্রদর্শনী জুড়ে সার্বিকভাবে অনলাইনে সংযুক্ত থাকবেন আসাফ উদ দৌলা। পোপ নিজে আসাফের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এটি ইতালির মাটিতে আসাফের ২য় একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এর আগে ২০১৮ সালে রিলিজিয়ন ট্যুডে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজনে ৩৩ টি ছবি নিয়ে ইতালির ত্রেন্তো শহরে করেন তার ১ম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। সে বছর তিনি বর্ষ সেরা আলোকচিত্রীর সুনাম অর্জন করেন। পরে তিনি ২০২০ সালে আগোরা “ওয়ার্ল্ড বেস্ট ফটো” বিশ্বের সেরা আলোকচিত্র: গ্রীন হিরো ২০২০ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
আলোকচিত্রী আসফ উদ দৌলা বলেন, সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে সারা বিশ্বের মানুষের আনাগোনার জায়গা। এখানে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি বিশাল আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে আর সেটা আমার মত একজন বাংলাদেশীর! এটা ভাবলেই বুকটা গর্বে বড় হয়ে যায়। বাংলাদেশের এই সামান্য একজন মানুষের ছবি দেখার জন্য এত মানুষের ভিড়। আমার প্রিয় সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমার প্রিয় জন্মভূমির জলবায়ু পরিবর্তন সহ মাটি ও মানুষের হাস্যোজ্জ্বল ৪০টি জীবনের ছবি। সবাই বাংলাদেশের নাম জানছে। এবং সে ছবিগুলি দেখে সারা বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশকে নতুন করে চিনছেন। বাংলাদেশ একটি সুখী সুন্দর, সম্ভাবনাময় উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা সারা পৃথিবীর মধ্যে তুলে ধরতে পেরে একজন বাংলাদেশী হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
আসাফ উদ দৌলা জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার ছেলে। তিনি ২০০৮ সালে তাঁর মামার দেওয়া ১.৩ মেগা পিক্সেলের একটি মোবাইল ফোন হাতে পান। সেই ফোন দিয়ে তিনি প্রথম ছবি তোলা শুরু করেন। তখন যা ভাল লাগে তাই তুলতেন। তখনো তিনি জানতেন না ইমেজ এবং ফটোগ্রাফ এর মানে। ২০১২ তে প্রথম সেমি এস এল আর ক্যামেরার কেনার পর শুরু হয় অনলাইনে পড়াশোনা, বিভিন্ন ওয়ার্কশপ করা, সিনিয়র ফটোগ্রাফার দের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে শেখা। পরে তিনি ২০১৪ সাল থেকে শুরু করেন ছবির প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। তার পর একের পর এক পেয়েছেন এ্যাওয়ার্ড, বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছেন বাংলাদেশকে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত মিলান এক্সপো ২০১৫ তে তার ৮ টি ছবি ৬ মাস ধরে প্রদর্শিত করেন একমাত্র এশিয়ান হিসেবে এবং সেখানে প্রথম ছবি যেটা দিয়ে প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে তিনি কাজাকিস্তান এক্সপো ২০১৭, সেখানেও তিনি তিন মাস ব্যাপী তার ছবি প্রদর্শনী করেন একমাত্র এশিয়ান হিসেবে। তিনি দেশে প্রচুর যৌথ প্রদশনীসহ, বিভিন্ন দেশে তার ছবি প্রদর্শিত করেন এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ত করেন। এছাড়াও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন, জিও এশিয়া-স্পেন ম্যাগাজিন সহ বিভিন্ন দেশে তার ছবির ফিচার প্রকাশিত করেছেন।
তিনি গত ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ইতালির ত্রেন্তো শহরে যান রিলিজিওন টুডে ফিল্ম ফেস্টিভাল ২০১৮ তে যোগদান করতে।, সেখানে ১২ দিন ব্যাপী তাঁর ৩৩ টি বাংলাদেশের অসম্ভব সুন্দর ছবি দিয়ে বাংলাদেশ কে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন “স্পিরিট অফ ফেইথ” নামক একক প্রদশনীর মাধ্যেমে। এবং সেখানে তিনি ফটোগ্রাফি এবং ফিল্ম মেকিং নিয়ে ১০ দিন ব্যাপী একটি ওয়ার্কশপ করেন ত্রেন্তো ফিল্ম কমিশন এবং ত্রেন্তো বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি সেখানে ফটোগ্রাফার অফ দি ইয়ার ২০১৮ এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হোন।
২০১৯ সালে তিনি আবারো লাল-সবুজের বাহক হয়ে যোগদান করেন নেপালের সপ্তম হিউমান রাইটস ফিল্ম ফেস্টিভালে এবং সেখানে তিনি তার ছবির প্রদর্শনীর তুলে ধরেন সারা বিশ্বের বিশ্ময় বাংলাদেশের অপার সৌন্দর্য। ২০২০ সালের শুরুতে ভারতের অরুণাচলে বাটারফ্লাই ফেস্টিভালে ও তার একটি একক প্রদর্শনী করেন এবং হলিউডের একটি ওয়েব সিরিজের নির্মাতা সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি একাধিক বার আমন্ত্রিত হয়েছেন বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেন্টর, স্পিকার হিসেবে। তার মধ্যে অন্যতম, ইতালির “ম্যারি কুরিতে তে, ভারতের ফাইন আর্টস একাডেমীতে সহ বাংলাদেশের অনেক কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে এবং তিনি বিচারক হিসেবেও কাজ করছেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার। তিনি সব সময় চেয়েছেন নতুন প্রজন্ম যেনো খারাপ নেশায় আসক্ত না হয়ে আলোকচিত্রের মতো একটা সুস্থ নেশায় আসক্ত হোন এবং নিজের দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারেন, এ লক্ষে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন, তিনি আয়োজন করেছেন অনেক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ছবি প্রদরশনী এবং প্রতিযোগিতা। সেখানে তিনি তুলে এনেছেন তরূণ অনেক মেধাবী প্রতিভা।
তিনি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন জয়পুরহাট ফটোগ্রাফিক গ্রুপ তিনি জয়পুরহাট এর বিভিন্ন জায়গা থেকে তুলে এনেছেন প্রচুর মেধাবী আলোকচিত্রী তিনি প্রতি ঈদের সময় জয়পুরহাট এর আলোকচিত্রী দের নিয়ে বড় বড় ওয়াকশপ করান, তাদের নিয়ে ফিল্ড ওয়ার্ক করেন, তাদের নিয়ে ফটো টক, ফটো ওয়াক, ফটো আড্ডা এর ব্যাবস্থা করেন।
একটা সময় তিনি যখন ২০ জন ফটোগ্রাফার খুঁজে পাননি পুরো জয়পুরহাট জেলায়। সেখানে তিনি তাঁর সব সর্বশেষ ওয়ার্কশ করেন জয়পুরহাট পৌরসভা মিলনায়তনে ১২০ জনের ও বেশী আলোকচিত্রি নিয়ে। এছাড়া তিনি জয়পুরহাটের প্রথম বারের মতো আন্তর্জাতিক মানের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। তরুণ মেধাবীদের পুরস্কৃত করেন এবং জয়পুরহাট এর সন্মানিত প্রবীণ আলোকচিত্রিকে সন্মাননা স্মারক প্রদান করেন। তিনি বর্তমানে বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ) তে আলোকচিত্রী হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি চলমান আছেন তার কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের পতাকা বিশ্বের মধ্যে তুলে ধরতে।