ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মেধাবী ছাত্রী উলফাত আরা তিন্নির (২৭) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
শুক্রবার (২ অক্টোবর) বিকেলে কুষ্টিয়া হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়ি যুগীপাড়ায় দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) মধ্যরাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শৈলকুপা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম।
তিন্নি শৈলকুপা উপজেলার যুগিপাড়া গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মৃত ইউসুফ আলীর মেয়ে। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী ছিলেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন– লাবিদ হোসেন, নজরুল, তন্ময় ও আমিরুল। এদের বাড়ি শেখপাড়া গ্রামে। অন্যদের গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান চালাচ্ছে বলে পুলিশ।
তিন্নির পরিবারের অভিযোগ, তিন্নির বড় বোনের সাবেক স্বামীর পাশবিক নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়ে তিন্নির মৃত্যু ঘটেছে।
স্বজনরা জানান, তিন্নির বোন মুন্নির শেখপাড়া গ্রামের পুনুরুদ্দীনের ছেলে জামিরুলের সঙ্গে বিয়ে হয়। বনিবনা না হওয়ায় ৬/৭ বছর আগেই মুন্নির সঙ্গে জামিরুলের বিচ্ছেদ ঘটে। মুন্নিকে তিনি আবার ঘরে নিতে চান। কিন্তু মুন্নি রাজি না হলে দীর্ঘদিন ধরেই লম্পট জামিরুল মুন্নির পরিবারের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। বাড়িটিতে কোন পুরুষ সদস্য না থাকায় পরিবারটি জামিরুলের নির্যাতনে অসহায় হয়ে পড়েছিল।
সবশেষে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জামিরুল ও নাঈমসহ ১০/১৫ জন শেখপাড়া তিন্নিদের বাড়িতে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। দুই ঘণ্টা পর আবারও জামিরুল ওই বাড়িতে যায় এবং তিন্নির ওপর নির্যাতন চালায়।
নিহত তিন্নির চাচা হেলাল উদ্দিন জানান, তিন্নির বড়বোন মিন্নির স্বাবেক স্বামীসহ কয়েকজন মিলে তাকে ধর্ষণ করেছে। এরপর তাকে গলাটিপে হত্যা করা হতে পারে।
তিন্নির মা হালিমা বেগম জানান, তার মেয়েকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে, এ ঘটনার তিনি দ্রুত বিচার দাবি করেন।
বড় বোন আখি অভিযোগ করে জানান, বাড়ির দোতালায় তিন্নির সঙ্গে জামিরুলের এমন কি করেছে যে, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে তরতাজা বোনের লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখলাম। তিনি এটাকে পরিকল্পিত হত্যা বলে অভিযোগ করেন।
তিন্নির মা হালিমা বেগম আরও জানান, তার মেয়ে খুবই মেধাবী। বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছিলেন। তার মেজো মেয়ে মুন্নিকে মারতে এসে জামিরুল ছোট মেয়ে তিন্নিকে হত্যা করেছে। তাদের সন্দেহ তিন্নিকে পাশবিক নির্যাতনের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাতে এ ঘটনার পরপরই টহল পুলিশ তিন্নির বাড়িতে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় নিহতের স্বজন বাদী হয়ে অভিযুক্ত ৮ জনকে আসামি করে শৈলকুপা থানায় একটি মামলা করেছে। পুলিশ গতরাতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও জানান, তিন্নির মৃত্যুটি রহস্যজনক। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তার সঙ্গে এমন কিছু করা হয়েছে যে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। ডাক্তারি পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। একজন মেধাবী ছাত্রীর এমনভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারেন না। পুলিশ বিষয়টির ওপর কঠোর নজরদারি করছে।