ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ইজিবাইক চালক খোকন মিয়াকে (৫৫) নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল নেতাসহ এজহারভুক্ত ১৩ জনের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে মগটুলা ইউনিয়নের কর্মা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ কল পেয়ে খোকনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় পুলিশ। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। শনিবার রাতে বাদ এশা ইজিবাইক খোকন মিয়ার জানাজার পর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত খোকন মিয়া কর্মা গ্রামের কছুম উদ্দিনের ছেলে।
খোকন মিয়া হত্যাকাণ্ডে শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে নিহতের ছেলে বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে উপজেলা মগটুলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নজরুল ইসলামসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে সোহাগ মিয়া (২৫), জোসনা আক্তার বেলিকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নিহত খোকন মিয়ার বাবা কছুম উদ্দিন (৭৫) বলেন, ছাত্রদল নেতা নজরুলের নেতৃতে তার চার ভাই ও ভারাটে গুন্ডাসহ ১০-১৫ জন মিলে দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার ছেলে খোকনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমার ছেলের বাম হাত কুপিয়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। মাথায় তিনটা কোপ দিয়েছে, দুই পা ভেঙ্গে থেঁতলিয়ে ফেলছে। হত্যার পর বাড়িঘর লুট করে নিয়ে যায় নজরুলরা। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নজরুল ইসলামের বাড়িতে গেলে তাদের বাড়ি তালাবন্ধ পাওয়া যায়। তাদের ব্যবহৃত একাধিক মোবাইল নম্বরে কল করলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
অপরদিকে খোকন মিয়া হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মগটুলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. নজরুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার পরের দিন শনিবার ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন তালুকদারে সই করা এক চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত নজরুলের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিএনপি ও দলের অঙ্গসংগঠনের কোনো নেতাকর্মীকে সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম সোজা উদ্দিনের সমন্বয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরহাদ আহমেদ বলেন, ‘জমি নিয়ে চলা বিরোধ আমরাও মীমাংসার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তারা কেউ মানেনি। হত্যার যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা ন্যক্কারজনক। অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় থাকে না। সে আমাদের সংগঠন করলেও সে পদ রাখার যোগ্যতা আর নেই।
খোকন মিয়া হত্যাকাণ্ডে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল পেয়ে পুলিশ গুরুতর আহত খোকন মিয়াকে উদ্ধারের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার এজহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকী আসামিদের গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যাহত আছে।