সাগর মল্লিক, ফকিরহাট থেকে:
বাগেরহাটের ফকিরহাটে শিশু পরিবারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে নানা প্রকার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি শিশু পরিবার (বালক) এদের জন্য আসে বরাদ্ধ। কিন্তু সেই বরাদ্দে পেট ভরে এ শিশু পরিবারের কর্মকর্তাদের। আর এদের দিনের পর দিন সকালটা শুরু হয় মাত্র এক প্লেট খিঁচুড়ি দিয়ে। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেন মাসের অর্ধেক এর ও বেশি সময় দুপুরে আর রাতে ভাত-মাছ আর মাংস দেওয়া হয়। সরকারি শিশু পরিবারে (বালক) থাকা মো. রাব্বি আকন, আজিজুল শেখ, কাইয়ুম, সিয়াম, শামীম শেখ জানায়, মধ্যে মধ্যে মাংস খেতে দেওয়া হয়। তাও বেশিরভাগ সময় পোল্ট্রি মুরগীর ছোট এক টুকরা। চাইলেও বেশি দেওয়া হয় না তাদের। এ এতিমখানায় থাকা অনেকেই নিজেদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, আমরা এখানে ৩ বেলাই খাই। কিন্তু, আমাদের পেট ভরে না। খালি খুদা লাগে। একবারে যা দেওয়া হয় তার পর চাইলে কখনোই দেয় না। বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে এতিম ছেলেদের জন্য সরকারি শিশু পরিবার চলে এমনইভাবে। অভিযোগ আছে অকে তবে দেখার কেউ নেই। আর যদি থাকতোই তবে এসব শিশুরা ভাল ভাবে খেয়ে পড়ে বাচতে পারতো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ এতিমখানার ছোট ছোট শিশুরাও বলছে তাদের সমস্যা, অভাব-অভিযোগের কথা। অন্যদিকে এ প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ঠিকমতোই চলছে উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত এ সরকারি শিশু পরিবার (বালক)। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অনিয়মের তথ্য পেয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।যা দেখে হতবাক হবার মত। অফিসে গিয়ে দেখা গিয়েছে অফিসের আনাচে-কানাচে ঘুরছে ব্লাঙ্ক বিল ভাউচার, খরচের নথিতে দেখা গিয়েছে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষকদের জন্য দুপুরের খাবারের তালিকায় অন্যান্যের পাশাপাশি সবজি ছিল। যেখানে ২০ প্লেট সবজি ১১০০ টাকায় ক্রয় করা হয়েছে।আর প্রতি প্লেট সবজির মুল্য ভাউচারে উঠেছে ৫৫টাকা করে।যা স্থানীয় হোটেলের মান অনুযায়ী অনেক গুন বেশীই। আরো একটি বিল ভাউচারে দেখা গিয়েছে ৩৩ স্কয়ারফুটের একটি ব্যানার বিল করা হয়েছে ১১০০ টাকায়। আর হিসাব অনুযায়ী পার স্কয়ার ফিট ব্যানার করতে খরচ হয়েছে ৩১ টাকার ও বেশি। খুলনার বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসে গিয়ে জানা গিয়েছে পিভিস্#ি৩৯;র স্কয়ার ফিট ১৫ টাকা এবং প্যানার ৩৯ স্কয়ার ফিট ২২/২৩ টাকা। সেক্ষেত্রে এখানেও জালিয়াতি বিল ভাউচার করেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ কর্মকর্তা অফিসে না এসেই মাস শেষে বেতন তুলে নিচ্ছেন অনায়াসে।দু একজন কর্মকর্তা,/কর্মচারী ছাড়া অধিকাংশই একদিন এসে বাকী দিনের হাজিরা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। যা দেখার কেউ নেই। শুধু এখানেই শেষ নই, এক প্লেট ভাত ২৫ টাকা, এক প্লেট লটপটি ৭০ টাকা, এক পিস পরাটা ১০ টাকা।যা স্থানীয় হোটেলের বাস্তব মূল্যের সাথে কোন মিল নেই। সরেজমিন অনুসন্ধ্যানকালে আরো দেখা গিয়েছে,প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সিয়াম চাউল ধোয়ার কাজে এবং শামীম শেখ রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিল। সংশ্লিষ্ট তথ্যে জানা গেছে এই সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্রে বার্ষিক বরাদ্ধ ৭,৯৮০০০ হাজার টাকা। যা প্রতি শিশুর মাসিক খাদ্য ও জ্বালানি বাবদ ২৫০০ টাকা, শিক্ষা বাবদ ৩৫০ টাকা, প্রশিক্ষণ বাবদ ১০০ টাকা, চিকিৎসা বাবদ ১০০ টাকা, প্রসাধনী বাবদ ১৫০ টাকা, পোষাক বাবদ ৩০০ টাকা করে মাসে মোট ৩৫০০ টাকা বরাদ্ধ। কিন্তু এই বরাদ্ধকৃত টাকা নিয়ে পকেট ভারি করছে কর্মকর্তারা। অতিদ্রুত সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বিষয়টি নজরে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এতিম শিশুরা ফিওে পাক তাদের অধিকার। এব্যাপারে ফকিরহাট সরকারি শিশু পরিবার (বালক) কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক খান আনিসুর রহমান সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। বাগেরহাট সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক এস.এম. রফিকুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যদি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় তবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর এই তদন্ত আমি নিজেই করবো।
