কুমিল্লার মুরাদনগরে এক দীর্ঘ শাসন ও ত্রাসের পরিসমাপ্তি হলো রক্তাক্ত পরিণতিতে। আলোচিত মাদক সম্রাজ্ঞী রোকসানা আক্তার ওরফে রুবি ও তাঁর দুই সন্তানকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে জনতা। কিন্তু মৃত্যু যখন এলো, তখন পাশে দাঁড়াল না কেউ। জানাজা পড়তে এলেন না প্রতিবেশীরা। একপ্রকার বাধ্য হয়েই লাশ দাফনের জন্য কবর খুঁড়েছে গ্রামপুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় অদ্ভুত পরিবেশে কড়ইবাড়ি গ্রামের কবরস্থানে রুবি, তাঁর ছেলে রাসেল ও মেয়ে তাসপিয়ার লাশ দাফন করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশগুলো যখন গ্রামে আসে, তখন চারপাশে নীরবতা। হাতে গোনা কয়েকজন আত্মীয় আর গ্রামপুলিশের কয়েক জোড়া হাত মিলিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
জেলা পুলিশের তথ্যানুসারে, রুবির বিরুদ্ধে করা মামলার সংখ্যা ছিল ১৬টি, ছেলে রাসেলের ৯টি, মেয়ে তাসপিয়ার ৫টি, মেয়ে রুমার ২টি এবং তাসপিয়ার স্বামী মনিরের ১১টি। তাদের পরিবারের মোট মামলার সংখ্যা ৪৩টি।
এছাড়াও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, রুবি দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ মাদক ব্যবসাসহ এলাকায় চুরি ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই সে মামলা দিয়ে হয়রানি করতো। অদ্যবধি সে ৮২টি মামলার বাদী। অধিকাংশ মামলা নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগে। যেই মামলাগুলোর আপোষ-মিমাংসা হয়েছে তার প্রায় সবকয়টিতে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছেন।
সর্বশেষ, স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষকের মোবাইল চুরির ঘটনায় আটক এক চোরকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে রুবি ও তাঁর জামাই সন্ত্রাসী কায়দায় চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও মেম্বারকে মারধর করেন। পরবর্তীতে ওই স্কুল শিক্ষকের ছেলে ও ভাতিজার উপর আক্রমণ করে। তারপরেই গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ জ্বলে ওঠে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনতা রুবি (৫৫), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২২) কে পিটিয়ে হত্যা করে। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭)। ঘটনার পর থেকেই পুরো গ্রাম পুরুষশূন্য, দোকানপাট বন্ধ। মানুষের মুখে-মুখে একটি কথা, “অবশেষে ত্রাসের শেষ হলো।”
এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, নিহত রুবির মেয়ে বাদী হয়ে ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে। তিনি আরও জানান, নিহতদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল। ##