গাজীপুরের শ্রীপুরে জন্মগতভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী একটি অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। পরিবারটির আট সদস্যই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় তারা দীর্ঘকাল ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। এই দুঃসংবাদ জানতে পেরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পরিবারটির জন্য একটি নতুন ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে দলটি।
আজ শনিবার (৫ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এস,এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু নিজে উপস্থিত থেকে ওই পরিবারের হাতে নতুন ঘরের চাবি তুলে দেন। নতুন এই আশ্রয় পেয়ে পরিবারটির সদস্যদের মধ্যে এক অনাবিল স্বস্তি ও আনন্দের ভাব লক্ষ্য করা যায়।
অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, “বিএনপি একটি মানবিক দল। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এই পরিবারের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে আমরা ভবিষ্যতেও এই পরিবারের পাশে থাকবো।”
ঘর হস্তান্তরকালে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোসলেহউদ্দিন মীরধা, শ্রীপুর ইউসিসিএ’র চেয়ারম্যান সাংবাদিক মাহফুল হাসান হান্নান, রাজাবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আকরাম হোসেন এবং মাওনা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিনসহ স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারের দুর্ভাগ্যের কথা প্রথম সামনে আসে প্রায় পাঁচ বছর আগে। শ্রীপুরের সাংবাদিক মুজাহিদ তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে “একই পরিবারের ৮ জন অন্ধ, কেমন কাটছে তাদের জীবন” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই সংবাদ একটি তরুণের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই পরিবারকে নিয়ে আরও অসংখ্য সংবাদ প্রচারিত হয়, যা তাদের করুণ অবস্থার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিভিন্ন সংগঠন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময়ে এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এই সহযোগিতার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, দশ বছর বয়সী অন্ধ মেয়ে জোনাকির চোখের চিকিৎসার উদ্যোগ। একজন তরুণ ব্যবসায়ী জোনাকির চোখে আলো ফেরানোর জন্য সংগ্রাম শুরু করেন। তার প্রচেষ্টায় ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত ইস্পাহানী ইসলামী চক্ষু ইনস্টিটিউট হাসপাতালে জোনাকির দুটি চোখে অপারেশনের মাধ্যমে লেন্স স্থাপন করা হয়। এই অপারেশনের পর জোনাকি এখন কিছুটা চোখে দেখতে পায়, যা পরিবারের সদস্যদের মনে আশার আলো জ্বেলেছে।
বিএনপির এই উদ্যোগ এবং অতীতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের সহযোগিতা প্রমাণ করে যে, সমাজে এখনো মানবিকতার ধারা বিদ্যমান। এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে একদিকে যেমন তাদের মৌলিক প্রয়োজন মেটানো হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতেও এই পরিবারটি সমাজের বিত্তবান এবং মানবিক মানুষদের কাছ থেকে সহযোগিতা লাভ করবে, যাতে তারা একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।