টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক বিন্নি খাল এই এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জানাযায়, ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজ উদ্যোগে খালটি খনন করেছিলেন। খালটি খননের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেচ সুবিধা বৃদ্ধি, জলাধার সংরক্ষণ ও কৃষি কাজে বিপ্লব ঘটানো এবং মিঠা পানির মাছ চাষের উন্নয়ন। এক সময় এই খাল ছিল এলাকার কৃষি ও পরিবেশের প্রাণ।
কিন্তু বর্তমানে খালটি তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে এটি রূপ নিয়েছে একটি সরু নালায়। খালজুড়ে ফেলা হচ্ছে মুরগির খামারের বর্জ্য, যা পানি দূষণ এবং পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, অবৈধভাবে খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে কৃষি জমি, লাগানো হয়েছে গাছপালা। এতে খালের স্বাভাবিক গতিপথ নষ্ট হয়ে গেছে এবং পানি চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে সংকট।
এ বিষয়ে হাজীপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন খান, মানিকপুরে গ্রামের শহিদ ও লতিফ খানসহ স্থানীয়রা “দৈনিক ঢাকা প্রতিদিন” কে জানান, একদিকে খালের পানি না থাকায় আশপাশের কৃষি জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে কোথাও কোথাও পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, ফসল উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে, এবং পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।
খালের আশপাশে বসবাসকারী অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিন্নি খাল আমাদের জীবনের অংশ ছিল। এখানে একসময় মাছ পাওয়া যেত, ফসল হতো প্রচুর। এখন সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। খালটি বাঁচাতে হলে দ্রুত দখলমুক্ত করতে হবে।”
পরিবেশবিদরা বলছেন, জলাশয় ও খালের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে অবিলম্বে দখলদারদের উচ্ছেদ, খাল পুনঃখনন, এবং জলজ পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারিভাবে অভয়াশ্রম ঘোষণা ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া এই সম্পদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, “সরকারের সদিচ্ছায় চলতি অর্থবছরে উপজেলার ১০টি খাল পানিপ্রবাহের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং এসব খাল দখলমুক্ত রাখার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন এবং কৃষিকাজে উন্নয়নের লক্ষ্যে বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।”
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ বলেন,সরকারের সদিচ্ছায় চলতি অর্থবছরে উপজেলার ১০টি খাল ও জলাধার পানিপ্রবাহের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং এসব খাল দখলমুক্ত রাখার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন এবং কৃষিকাজে উন্নয়নের লক্ষ্যে বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।