শামীম হোসেন সামন, নবাবগঞ্জ থেকে : ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা ইউনিয়নের হাসনাবাদ ও নয়ানগর গ্রামের জনসাধারন একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। হাসনাবাদ ও নয়ানগর গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। আর যুগ যুগ ধরে ইছামতি নদী গ্রাম দুইটিকে আলাদা করে রেখেছে। কিন্তু সেখানে নেই পারাপারের কোন ব্যবস্থা। নেই কোন সেতু। ফলে প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নয়ানগর ও ইমামনগর এলাকাবাসী নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাতায়াতের জন্য একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করছে। বাঁশের সাঁকোটির অবস্থাও জরাজীর্ণ।
সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন যেতে হয়পুরাতন বান্দুরা বাজারে এবং উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট ইউফ্রেজিস গালর্স স্কুল এ্যান্ড কলেজ, বান্দুরা হলিক্রশ স্কুল এ্যান্ড কলেজ সহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, হাসপাতাল হাসনাবাদ গীর্জায় যেতে হলে নয়ানগরবাসীকে ইছামতি নদী পাড় হতে হয়। বিকল্প রাস্তা হিসেবে নতুন বান্দুরা ব্রীজ পার হয়ে পুরাতন বান্দুরা বাজার বা স্কুল ও কলেজে যেতে হলে তাদেরকে দ্বিগুণ সময় ব্যয় করতে হয় । যাতায়াত অবস্থা ভাল না হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে নয়ানগর গ্রামে। নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে এলাকাটি। রাস্তাঘাটের এতই বেহাল দশা যে গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী। নয়ানগর এলাকাবাসী বর্ষার ভরা মৌসুমে নৌকায় নদী পার হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে ইছামতি নদীতে পানি কমে গেছে নদীতে যেটুকু পানি আছে সেখানে নৌকা চলাও অসম্ভব। আবার পায়ে হেটে পার হওয়াও যায় না। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ে ছাত্র ছাত্রীসহ এলাকার সাধারন জনগণ। নদীতে নেই কোন পারাপারের সেতু। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছে একটি বাঁশের সাঁকো। সাঁকোটি ত্রিখন্ডিত। দুই পাড়ে দুইটি সাঁকো আর মাঝখানে একটি ডেঙ্গি নৌকা দিয়ে সাঁকোটি পরিপূর্ণ করা হয়েছে। বাঁশের সাকো দিয়ে তখন পার হয় ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা, যা অনেকটা ঝুকিপূর্ণ। যেকোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক র্দুঘটনা। দৈনন্দিন নানা কাজে এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হতে হয় অসংখ্য মানুষকে। বিশেষ করে হাসনাবাদ সেন্ট ইউফ্রেজিস গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্রীদের, বান্দুরা ও হাসনাবাদ সরকারী প্রাথমিক বালক বালিকা বিদ্যালয়সহ আশেপাশের বিভিন্ন কিন্ডারগার্ডেন এর ছোট ছোট শিক্ষার্থীদেরকে নয়ানগর থেকে এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হয়ে আসতে হয়। সেতু দিয়ে কোন যানবাহন নেওয়া যায় না। ফলে বিকল্প রাস্তা ২ কিলোমিটার ঘুরে বাড়িতে নিতে হয়। জরুরি কোনো মুমূর্ষ রোগীও হাসপাতালে নিতে নিতে রোগীর অবস্থার অবণতি হয়।
নয়ানগর গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পার হতে খুব ভয় লাগে, কখন যে সাঁকো ভেঙ্গে নদীকে পড়ে যাই। আমাদের জন্য হলেও এখানে একটি ব্রীজ হওয়া দরকার।
নয়ানগরের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, আমি পুরাতন বান্দুরা বাজারে ব্যবসা করি। প্রতিদিনই এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময় হাসনাবাদ নয়ানগরে একটি সেতু করার প্রতিশ্রæতি দিলেও আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন হয়নি। এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে যত দ্রæত সম্ভব এখানে একটি ব্রীজ করা দরকার।
প্রবাসী সুকুমার পাল জানালেন তার দুঃখের কথা। তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে কোনো রকম চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু নৌকাও মাঝে মধ্যে ডুবে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন আক্ষেপের স্বরে বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের একটি স্বপ্ন ছিল নয়ানগর ইছামতি নদীতে একটি সেতু হবে। নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিরা শত আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পর তা কথার মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকে। আমাদের স্বপ্ন যেন স্বপ্ন ই থাকে । বাস্তবায়ন আর হয় না। আর কবে হবে সেতু? এই ধরনের নানা সমস্যায় পড়তে হয় প্রতিদিন এলাকাবাসীকে তাদের দীর্ঘদিনের আশা হাসনাবাদ নয়ানগর একটি সেতু হবে। যে সেতুটি দূর করতে পারবে নয়ানগরবাসীর দীর্ঘদিনের দুঃখ। তারা আশায় বুক বেঁধে আছে কবে তৈরি হবে তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন হাসনাবাদ-নয়ানগর সেতুটি। এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী তরুণ কুমার বৈদ্য বলেন, সাঁকোটির ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি। সেখানে একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা আছে।