উজানের ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকষ্মিক বন্যায় জামালপুরে অর্ধশত গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার জমির রোপা আমন, মরিচ ও শীতের সবজিসহ বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হঠাৎ অকাল বন্যায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে হাজার হাজার কৃষক।
জামালপুর সদর, মেলান্দহ, ইসলামপুর, সরিষাবাড়ি ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার অর্ধশত গ্রামের সহস্রাধিক হেক্টর জমির রোপা আমন, মরিচ, ভূট্রা, মাসকলাই, পিয়াজ, চিনাবাদাম ও শীতের সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিনের টানা পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার রোপা আমন ৭২১ হেক্টর, ভূট্টা ১৭৫ হেক্টর, মচির ১৪৩ হেক্টর, মাসকলাই ৭৭ হেক্টর, মিস্টি আলু ১৫ হেক্টর, শাকসবজি ৫৬ হেক্টর, পেঁয়াজ ১ হেক্টর ও চিনাবাদাম ০২ হেক্টরের ফসল ডুবে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানায়, যে বন্যার ভয়ে তারা ধান রোপন করতে দেরি করেছে অথচ সেই বানের পানিতেই ভেসে গেল তাদের সোনালী সবুজ ধানসহ নানা ফসল। ধান ও রবি শষ্য ডুবে যাওয়ায় তাদের খোরাকী (বছরের খাবার) থাকলো না। তাই আগামী দিনগুলোর চিন্তায় তারা উদ্বিগ্ন। তাদের কষ্টার্জিত সোনালী ধানসহ রবিশষ্য পানিতে তলিয়ে গেলেও কৃষি বিভাগের লোকজন কোন খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না।
চর মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক কাজী ইসমাঈল হোসেন বলেন, গত দুইদিনের পানিতে ধানখেত ও মরিচ খেত তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে মরিচ খেতে পানি যাওয়ার সাথে সাথে মরিচের গাছগুলো মরে যাচ্ছে। খেতের আশেপাশে বাঁধ দিয়ে বন্যার পানি আটকানো যাচ্ছে না
হরিপুর গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী বলেন, প্রতি শতাংশ জমিতে হাইব্রীড জাতের মরিচ চাষ করতে খরচ হয়েছে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা। এই মরিচ চাষ করেই তার সংসার চলে। কিন্তু এই অসময়ের বন্যায় সব ভেস্তে গেল।
চরমল্লিকপুর গ্রামের ধানী কৃষক মীর আহম্মদ বলেন, আমনের মাঝামাঝি সময়ে ধানের গোড়া পঁচা রোগসহ নানা রোগের আক্রমণ ছিল। বিভিন্ন প্রকার কিটনাশক প্রয়োগে তা কিছুটা কমে ছিল। এরমধ্যে এই অসময়ের বন্যা কৃষকের মাথায় মরার উপর খরার ঘা হয়ে নেমে এসেছে
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা জানান, এই সময়ে সাধারণত বন্যা দেখা যায় না। কিন্তু এবার এ অসময়ের এ বন্যার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না । তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে কয়েকদিন টানা ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জামালপুরের নীচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে ভারতে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার কারণে উজানের পানি কমতে থাকবে।