আব্দুল্লাহ আল মামুন, পার্বতীপুর থেকে : তালাক নামা গ্রহণে অস্বীকার করায় দিনাজপুরের পার্বতীপুরে স্বামীর মারধরে গুরুতর আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছে স্ত্রী নার্গিস আক্তার (২৫)। উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চান্দেরডাঙ্গা কার্য্যালয় থেকে তালাক সংক্রান্ত বিচারের আদেশের কপি নিয়ে রঘুনাথপুর নয়াপাড়া গ্রামে তার বাবার বাড়িতে ফেরার পথে গত ১৭ অক্টোবর এ হামলার শিকার হন ওই গৃহবধূ।
ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রায় ৯ বছর আগে পার্বতীপুর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর নয়াপাড়া গামের নজমুল হকের ছেলে নুরুল আমিনের (৩৩), সঙ্গে একই গ্রামের বাবুল হোসেনের মেয়ে নার্গিস আক্তারের বিয়ে হয়। যৌতুক হিসেবে নগদ ১ লাখ টাকা ও অন্যান্য উপঢৌকোনসহ মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। নুরুল আমিন – নার্গিস দম্পতির ৫ বৎসর বয়সী ইয়ানুর ইসলাম নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই বাবার বাড়ি হতে আরও লক্ষাধিক টাকা আনার জন্য স্ত্রী নার্গিস আক্তারের উপর শুরু হয় স্বামী নুরুল আমিন ও তার বাবা মায়ের অমানবিক নির্যাতন। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম্য আদালতে ৮-৯ বার বিচার অনুষ্ঠিত হয়। নির্যাতনের মুখে মেয়ে নার্গিসকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসতে বাধ্য হন বাবা পেশায় ফেরিওয়ালা বাবুল হোসেন (৫০)। পরে নার্গিস বাদী হয়ে নুরুল আমিনসহ ৫ আসামীর বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ মার্চে দিনাজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। পরে একই বছরের ৮ জুলাই দিনাজপুর পারিবারিক জজ আদালতে ভরন পোষন ও দেন মোহরের অপর আর একটি মামলা করেন নার্গিস আক্তার। এর পর থেকে তার স্বামী মামলা তুলে নেয়ার চাপসহ বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রর্দশন করে আসছিলো স্বামী নুরুল আমীন।
এদিকে, চলতি বছর ৩ মার্চ স্বামী নুরুল আমীন নার্গিসকে এক তরফা তালাক দিয়ে তার অনুমতি ছাড়াই গত ২৮ আগষ্ট বদরগঞ্জ উপজেলার ওসমানপুর মুন্সীপাড়া গ্রামের দুলাল মিয়ার মেয়ে মোছাঃ দেলোয়ারা বেগমকে বিয়ে করেন। গত ১৫ অক্টোবর স্থানীয় রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান একরামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গ্রাম্য আদালতের বিচারে “তালাক অকার্যকর” বলে আদেশ দেন আদালত। একদিন পর ১৭ অক্টোবর গ্রাম্য আদলতের আদেশের কপি নিয়ে বাবার বাড়ি ফেরার পথে নার্গিস আক্তারের উপর হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী নার্গিস আক্তার বলেন স্বামী-সংসার সব হারিয়ে আমি এখন দু’চোখে শুধুই অন্দকার দেখছি। সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমার আকুল আবেদন, দ্রুত ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আমি যেনো আমার এক মাত্র সন্তানকে নিয়ে বেচে থাকার অবলম্বন খুজেই পাই। আর কেউ যেনো আমার মত এমন দুর্ভোগের শিকার না হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত স্বামী নুরুল আমিন স্ত্রী নার্গিসকে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, সে নয় আমিই তার নির্যাতনের শিকার। বাধ্য হয়ে আমি তাকে তালাক দিয়ে নতুন সংসার শুরু করেছি।
