.
.
.
দালালের আখড়ায় পরিনত হয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩ দিয়াবাড়ীর উত্তরা কার্যালয়। প্রকাশ্যেই চলছে তাদের বিচরণ। কার্যালয়টির বড় কর্তাদের সামনেই চলে তাদের সীমাহীন দাপটের বেসামাল বানিজ্য। দেখার কেউ নেই। গ্রাহক ও সেবাপ্রত্যাশীরা প্রতিদিনই এখানে এখানে এসে দালাল চক্রের হাতে ভোগান্তিতে হচ্ছে। অনিয়মই সেখানে পরিনত হয়েছে নিত্যদিনের নিয়মে। দালাল চক্রগুলোর উৎপাতে রীতিমত অতিষ্ঠ সাধারণ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাশী থেকে শুরু করে যে কোন বিষয়ে সেবা প্রত্যার্শীরা। সরকারি এই দপ্তরটিতে কোনো সেবাই দালালদের মাধ্যম ছাড়া মেলে না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী সেবা প্রত্যার্শী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা মেট্র সার্কেল-০৩ ’র এই বিআরটিএ অফিসে টাকা ছাড়া যেন নড়েনা একটি ফাইলও। নড়ে না দালালের সাংকেতিক ইশারা ছাড়া ফাইলের পাতায় একটি কলমও। লিখিত পরীক্ষা থেকে ড্রাইভিং টেস্টসহ সব জায়গাতেই যেন দালাল চক্রের সীমাহীন অপ্রতিরোধ্যতা।
এখনকার দালাল চক্রগুলো এতটাই তৎপর, তাদের রয়েছে ভিন্ন ও অভিন্ন নানান কার্য কৌশলী গ্রুপ। যে গ্রুপগুলোর নেতৃত্ব দেন স্থানীয় কয়েকটি প্রভাবশালী মহল ও অফিসটির বিআরটিএর কিছু কর্মকর্তারা। মূল তিনটি ভাগে ভিক্ত হয়ে কাজ করে চক্রটি। অকেজো ভঙ্গুর গাড়ির ফিটনেসের জন্য রয়েছে একটি চক্র। ড্রাইভিং টেস্ট ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা আরো দুইটি চক্র।
সরেজমিন ঘুরে ভুক্তভোগীদের কথা বলে জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাত্যার্শী পরীক্ষার্থীদের চেয়েও এখানে দালালের সংখ্যাই বেশী। ড্রাইভিং প্রাইভেট কার ও মটরসাইকেল ড্রাইভিং টেস্ট পরীক্ষায় খোদ পরিদর্শকের সামনেই চলে এ তুঘলকি কান্ড। এ যেন দেখেও না দেখার ভান করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। তারা নিজেরাই যেন দালাল সিন্ডিকেটগুলোর নৈপথ্যের অভিভাবক। যার প্রমাণও মিলে কয়েকজন দালালদের সাথে একান্ত চা চক্রে বসে।
নিজের পরিচয় গোপন করে নিজেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যার্শী পরিচয় দিয়ে কথা হয় দালাল চক্রের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোন কিছুই লাগবেনা আপনি গাড়ি অথবা মটরসাইকেলের সিটে বসলেই পাস। লিখিত পরীক্ষায় কিভাবে পাস করব? এতগুলো ট্রাফিক চিহ্নি কিভাবে মনে রাখব? এমন প্রশ্ন তোলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলেন, শুধু নামটা লিখবেন আর যেখানে স্যারেরা বসে সেখানে গিয়ে আপনার লার্নার নাম্বার বলবেন, তাতেই পাশ। টাকা দিবেন তো টাকা দিলে এত কিছুর তো দরকার নেই। নিশ্চিন্তে শুধু পরীক্ষা দিবেন। বাকিটা আমরা দেখে নিব। পাশ ফেল আমাদের বিষয়, আপনার বিষয় না।
ঢাকা প্রতিদিনের এ প্রতিবেদকের পরিচয় গোপন করে কথা হয় মো. হোসেন নামে এক প্রাইভেট কার চালকের সঙ্গে । তিন মাস আগে ঢাকার উত্তরায় এক সরকারি কর্মকর্তার গাড়ি চালানোর কাজ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল। সেটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। দ্রুত যেন নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারি, সেজন্য এখানে আবেদন করেছি। এখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজই হয় না। ১৫ হাজার টাকায় চুক্তি করে এক দালাল ধরলাম। দ্রুত লাইসেন্স না পেলে চাকরিটাই থাকবে না।’পওে ওই দালালকে আর খুঁেজ পেলাম না।
দালাল চক্রের এই তৎপরতা নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) কাজী মো. মোরছালীন ঢাকা প্রতিদিনকে বলেন, আমরা নিয়মিত দালাল চক্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে রাজি না। আপনি হেড অফিসের সাথে কথা বলেন।
আপনাদের অনেক কর্মকর্তা এর সাথে জড়িত এমন প্রশ্ন উত্তরে তিনি বলেন, প্রমানসহ অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিব। তবে দালালদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময় চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে, বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) আজিজুল ইসলাম ঢাকা প্রতিদিনকে বলেন, সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিব। দালালদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত সবসময় ছিল, সামনেও থাকবে।
বিআরটিএ পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী ঢাকা প্রতিদিনকে বলেন, এসব বিষয়ে আপনি চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা বলেন। আর প্রশ্নগুলোর উত্তর ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়, আপনি সে কমিটির কাছে প্রশ্ন করেন।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান ঢাকা বলেন, অদক্ষ চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ফলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। যেভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয় তাতে দক্ষ চালক পাওয়া যাবে না।’সংস্কার ছাড়া এ পদ্ধতি থেকে বেরোনো যাবে না। সংস্কার লাগবে বিআরটিএর।