কখনও কি ভেবে দেখেছেন যে কেন আমাদের নিয়মিত হাইড্রেটেড থাকার কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়, এমনকি যখন আমরা তেমন তৃষ্ণার্ত থাকি না তখনও? আমাদের শরীর ঘাম এবং প্রস্রাবের মতো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত পানি হারায়। এছাড়াও পানি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক ক্রিয়াকলাপে ভূমিকা পালন করে। যেমন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করা, হজমে সহায়তা করা, আমাদের কোষে পুষ্টি পরিবহন করা, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা এবং ইলেক্ট্রোলাইটের সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখা। সুতরাং, এটি স্পষ্ট যে আমাদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করে পানির ঘাটতি পূরণ করতে হবে, কিন্তু কতটা?
আট-গ্লাস পানির নিয়ম
প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ আপনিও নিশ্চয়ই শুনেছেন? কিন্তু সবার জন্যই কি এক নিয়ম হতে পারে? আপনার প্রয়োজনীয় পানির আদর্শ পরিমাণ আপনার জীবনধারা, লিঙ্গ, বয়স, কার্যকলাপের স্তর এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে পারে। আপনার দিনে কতটুকু পানি পান করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে সবচেয়ে ভালো হয়। আপনি যদি দিনের বেশিরভাগ সময়ই বসে থাকেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কাজ করেন এবং বেশি না ঘামেন, তাহলে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করাই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি পান করলে অতিরিক্ত হাইড্রেশন হতে পারে।
পুষ্টিবিদরা পানির ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতিদিন ২.৫ লিটার পান করার পরামর্শ দেন। ডিহাইড্রেশন গুরুতর মাথাব্যথা এবং মেজাজ পরিবর্তনের মতো সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান না করার কারণে এমনটা ঘটতে পারে। যারা বেশি পরিশ্রম করেন যেমন ক্রীড়াবিদ বা রিকশাচালক, তাদের ঘামের মাধ্যমে পানি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে আরও বেশি পানির প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আট গ্লাস পানি পানের নিয়ম বা সকালে চার গ্লাস পান করার শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এর পরিবর্তে প্রতি কিলোগ্রাম শরীরের ওজনের জন্য ৩৫ মিলি পানি পান করার পরামর্শ দেন তারা।
কখন পানি পান করবেন
মর্নিং হাইড্রেশন: ঘুম থেকে ওঠার পর সকালে পানি পান করলে তা অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে সক্রিয় করতে এবং শরীরকে পুরো দিনের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করে।
পোস্ট-ওয়ার্কআউট:
ব্যায়াম করার পরে হাইড্রেটিং হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
খাবারের আগে:
খাবারের আধা ঘণ্টা আগে পানি পান করলে হজমশক্তি ভালো হয় এবং অতিরিক্ত খাওয়া রোধ হয়।
খাওয়ার পরে:
একই নিয়ম প্রযোজ্য। খাবার হজম করার জন্য আপনার শরীরকে আধা ঘণ্টা সময় দেওয়া উচিত এবং তারপরে পানি পান করা উচিত।
স্বাস্থ্য সমস্যা:
শরীরে পানির ঘাটতি হলে তা নানাভাবে প্রকাশ পায়। প্রস্রাবের গাঢ় হলুদ রং ডিহাইড্রেশন নির্দেশ করতে পারে। শুকনো ফাটা ঠোঁট ডিহাইড্রেটেড শরীরের অন্যতম লক্ষণ। এই পরিস্থিতিতে আরও পানি পান করার চেষ্টা করুন।
অসুস্থ বোধ করলে:
শরীরের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং দ্রুত সেরে ওঠার জন্য অসুস্থ হলে সঠিক হাইড্রেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্লান্ত বোধ করলে:
ক্লান্ত হয়ে পড়লে পানি পান করুন। এটি আপনার সিস্টেমকে পুনরায় শক্তি জোগাতে সাহায্য করতে পারে এবং একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বুস্ট প্রদান করতে পারে।
যেভাবে পানি পান করবেন
* বসে পানি পান করুন। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের তরল পদার্থের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। আপনি যদি বসে পান করেন তবে আপনার পেশীগুলো আরও ভালো উপায়ে উপকার পায় এবং তা আরও শিথিল হয়।
* এক নিঃশ্বাসে অনেকটা পানি পান করবেন না। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেওয়ার সময় ধীরে ধীরে পানিতে চুমুক দেওয়া ভালো।
*ঠান্ডা পানির বদলে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করুন। ঠান্ডা পানি হজমের জন্য ভালো নয়। গরমের দিনে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বা মাঝারি ঠান্ডা পানি পান করুন। হালকা গরম পানি আরও ভালো কারণ এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।