আব্দুল বাশির, গোমস্তাপুর থেকে:
গরু-খাশি জবাই করাতে এক ধরনের আনন্দ পাওয়া যায়। শিশুদের কাছে এ মুহূর্তটি চরম খুশির। ঈদ হলে তো কথায় নেই। কারণ ঈদ মানে আনন্দ আর এই ঈদকে সামনে রেখে মুসলমানদের মধ্যে চলে কোরবানির পশু জবাই করার পালা। কোরবানির পশু হোক আর বছরের যে কোন সময় হোক, জবাই করার পর মাংশ তৈরিতে লাগে ছুরি, বটি, হাঁসুয়া দাসহ অন্যান্য যন্ত্র। কিন্তু এ যন্ত্র কোথায় পাওয়া যায়, কে বানায় এ নিয়েই আমাদের আজকের এ প্রতিবেদন। বলছি, যন্ত্র তৈরির কারিগর কর্মকারদের কথা। এ প্রতিবেদন তৈরিতে আমরা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত কর্মকারদের সঙ্গে কথা বলেছি। উপজেলায় প্রায় ৫০-৫৫ জন কামার (কর্মকার) রয়েছে। এক সময় দা, ছুরি, বটি, হাঁসুয়া সহ পশু জবাই এর সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করত এখানকার কামার শিল্পের কারিগররা। কামার পল্লীগুলোতে বিশেষ করে কোরবানির সময় সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ভিড় করতো বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মানুষজন। সারা বছর খুব ভালো না কাটলেও এ সময়টাতে তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতো।
এবার ঈদুল আযহার তেমন ছোঁয়া নেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার কামার দোকানগুলোতে। প্রতিবছর এই সময়ে ছুরি, বটি, হাঁসুয়া দাসহ কোরবানির সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করলেও এবারের চিত্র অনেকটা ভিন্ন। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে একদিকে কমেছে ক্রেতার সংখ্যা, পাশাপাশি কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নামমাত্র লাভে বিভিন্ন কোরবানির সামগ্রী বিক্রি করছেন তারা। উপার্জন কমে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কামারদের। নেই তেমন ব্যস্ততা, কমে গেছে কাজের পরিধি। শুধুমাত্র দা, বটি, হাসুয়া সান দেওয়া ছাড়া নতুন সামগ্রী তৈরির চাহিদা অনেকটা কমে গেছে। উপজেলাধীন শ্রী রূপচান কর্মকার জানান, কোরবানির সামগ্রী তৈরির কাঁচা মালসহ কয়লা ও রেতের দাম বেড়েছে। তেমন চাহিদা না থাকায় এসব পণ্য তারা সীমিত লাভে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের কাছে ১শ টাকা থেকে শুরু করে প্রায় হাজার টাকার বিভিন্ন কোরবানির সামগ্রী রয়েছে।
ঈদকে সামনে রেখে বাড়তি আয়ের আশা করলেও কাঙ্খিত কাজ না থাকায় হতাশায় দিন কাটছে তার মতো অনেক কর্মকারের। গত ঈদগুলোতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করতে পারতো। কিন্তু এবার তাদের ধারণা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করতে অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। একই যন্ত্র তৈরি করতে তাদের চারটি প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়। আর এই প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে একটি যন্ত্র তৈরি করতে ১ ঘণ্টা, ২ ঘণ্টা ও ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। পরিশ্রমের তুলনায় এ যন্ত্রগুলোর মূল্য একেবারে কম। রুপচান কর্মকার বলেন, দা-চাপাতি বানাতে ৪০০-৪৫০ টাকা, বড় ছুরি ৬০০-৭০০ টাকা, ছিলা ছুরি ১৫০-৩০০ টাকা। শান দেওয়ার মজুরি প্রকার ভেদে ৮০ ও ১২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর ছোট ছুরি ৩০-১০০ টাকা পর্যন্ত আছে। অপর আরেকজন কর্মকার শ্রী বিফল বলেন, করোনার প্রভাবে রোজগার কমে যাওয়ায় নিজের পরিবারের ভরণ-পোষণের পাশাপাশি কারিগরদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। এ পেশা ছাড়া তাদের অন্য পেশায় মধ্যে মধ্যে কাজ করতে হয়। কৃষি কাজ করতে হয় পেটের দায়ে। তাদের কপালে কখনও জুটে না সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। ধারদেনা করে ব্যবসা ধরে রাখলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তিনি।