বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। এমনকি বিগত দেড় যুগের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে উজ্জীবিত অবস্থায়ও রয়েছে দলটি। মাত্র এক মাস সময়ে দলীয় চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারামুক্ত হয়েছেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে; একের পর এক মামলা থেকে খালাস পেয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে; নেতাকর্মীরাও রাজনৈতিক মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছেন। সব মিলিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে।ঠিক মাস-ছয়েক আগেই অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করে আসছিলো বিএনপির মফস্বল থেকে কেন্দ্রীয় নেতারাও। তবে দলের বিরাজনীতিকরণ ও দুঃসময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বিএনপি নেতা বাবু পল্লব রায়। তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, দেশের রাজনীতির ক্রান্তিলগ্নে ও দুঃসময়ে নান্দাইল উপজেলা বিএনপির হাল ধরে মাঠে সক্রিয় ছিলেন পল্লব রায়। দলের বিভিন্ন দিবস, সভা-সমাবেশও করেছেন নেতাকর্মীদের নিয়ে। এবার এই নেতাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন নির্যাতিত নেতাকর্মীরা। তাদের আশা দল অবশ্যই দুঃসময়ের এই নেতাকে নিরাশ করবে না। আগামীতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দেখতে চান তৃণমূল বিএনপি’র নেতারা।দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত ১৬ বছর দলের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। এসবের মধ্যে পাশে থেকে বাবু পল্লব রায় দিয়েছেন সাহস। কারাবন্দি নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের দায়িত্বসহ দলের নেতাকর্মীদের কারামুক্তির ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিগত ১৬ বছর ধরে এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন অনেক নেতা। অনেকে আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে আপস করে ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। বিএনপির পরিচয় পর্যন্ত দেননি। ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীরা মিথ্যা মামলা নিয়ে আদালত পাড়ায় ঘুরেছেন, খবর পর্যন্ত নেননি কেউ। জনৈক শফিকুর রহমান আলমগীর নামক বিএনপির এক নেতা বলেন, বাবু পল্লব রায় আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক। তাকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পেলে আমরা খুবই খুশি, আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত হবো। আমরা বিশ্বাস করি তার নেতৃত্বে একটি যোগ্য কমিটি পেতে যাচ্ছি আমরা। যে কমিটিতে ত্যাগী, কারাবরণকারী, নির্যাতিত কর্মীরা স্থান পাবেন। আশা করি ত্যাগী নেতা হিসেবে বাবু পল্লব রায়কে দল মূল্যায়ন করবেন বলে আমারা বিশ্বাসী ।সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ফরিদ উদ্দিন সরকার বলেন, নান্দাইল উপজেলা হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির উর্বর ভূমি। নান্দাইলে রাজনৈতিক কোনো গ্রুপিং নয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। এটাই আমাদের রাজনীতির সৌন্দর্য। ফ্যাসিস্ট সরকারের উত্তাল সময়েও নান্দাইল বিএনপি সক্রিয় ছিল। আমরা আশা করবো, কমিটি গঠনের সময় ত্যাগীরাই সবচেয়ে বেশি মূল্যায়িত হবে।তৃণমূলের চাওয়া প্রসঙ্গে পল্লব রায় বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম ও আদর্শকে লালন করে ছাত্রজীবন থেকে পারিবারিকভাবে ছাত্রদল করেছি তার পর দীর্ঘদিন যুবদল করেছি। ড. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শামস ভাইয়ের নির্দেশনায় বিগত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার আমলে সকল আন্দোলন সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেছি। আমার কাছে পদের চেয়ে দল বড়। বিএনপি আমার পরিবার, রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে দেশ মাতা খালেদা জিয়াকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মানে যতদিন নিতে পারব না, ততদিন আমি রাজপথ ছাড়ব না।
জানা গেছে,বাবু পল্লব রায় এর বাবা(দীপক চন্দ্র রায়)নান্দাইল পৌর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। পারিবারিকভাবেই তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত। ১৯৯২ সালে পল্লব রায় নান্দাইল উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য হন। এরপর ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে তিনি এবং তার পিতা (দীপক চন্দ্র রায়) প্রথম কারাভোগ করেন, পরবর্তীতে নান্দাইল উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে উত্থান হয়। এরপর ২০০১ সালে আবারও বিএনপি-আওয়ামীলীগ সংঘর্ষে মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন।গত ২০০৪ সালে পল্লব রায় উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ময়মনসিংহ জেলা শাখার অন্যতম সদস্য হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। এরপর সফলতার সাথেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির ইতি টানেন। পরে ২০০৫ সালে যুবনেতা হিসেবে জাতীয়তাবাদী যুবদল নান্দাইল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী যুবদল ময়মনসিংহ জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার তাণ্ডবে এই নেতার বাড়িঘর লুটপাট করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও বাবু পল্লব রায় তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদের ময়মনসিংহ উত্তর জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন, এক/এগারো (ফখর উদ্দিন মঈন উদ্দীন) সরকারের নির্যাতনের স্বীকার হয়ে দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগ করেন। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নান্দাইল উপজেলা শাখার সদস্য হিসেবে দলীয় সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। ২০১৮ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার রায়ে কেন্দ্র করে বিস্ফোরণ মামলা কারাবরণ করে এই নেতা।এছাড়াও বাবু পল্লব রায় একজন দক্ষ সংগঠক ও সুবক্তা হিসেবে রাজনৈতিক সর্ব মহলে খ্যাতি ও সুপরিচিত রয়েছে বলে জানা যায়।