আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পেরুর আমাজন রেইনফরেস্টের সোনার খনির কিছু বিরল ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সাধারণত লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা এই গর্তগুলো সূর্যের আলোয় প্রতিফলিত হয়ে আলোকিত হয়েছে যা নাসার ছবিতে ধরা পড়েছে। গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের এক মহাকাশচারী এই ছবিগুলো তুলেছেন।
নাসা জানিয়েছে, এই ‘স্বর্ণ নদী’গুলো প্রকৃতপক্ষে বিশাল আকৃতির গর্ত যা অবৈধভাবে খনন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ-পূর্ব পেরুর মাদ্রে দে দিওস এর সোনার খনির অবস্থা কতটা ধ্বংসাত্মক অবস্থায় গেছে সেই নজিরও এই ছবিগুলোর মাধ্যমে পাওয়া যায়। পেরু প্রথম সারির স্বর্ণ রফতানিকারক একটি দেশ। মাদ্রে দে দিওসে সোনার বিশাল অনিবন্ধিত শিল্প রয়েছে যেখানে হাজার হাজার খনি শ্রমিক কাজ করে।
এই অঞ্চলটি আমাজন বনের মধ্যে পড়েছে। জীববৈচিত্রের এক সমৃদ্ধ অঞ্চল এটি। কিন্তু সোনার খনির কারণে বন ব্যাপক মাত্রায় নিধন হচ্ছে। এছাড়া অনেক প্রাণিদের আবাসস্থলও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। সোনা নিষ্কাশনে পারদ ব্যবহার করা হয় ফলে খনির আশেপাশের অঞ্চলে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানিরা বলছেন, এই পারদের একটি বড় অংশ নদী বা বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে।
নাসা জানিয়েছে, এই গর্তগুলোতে শ্রমিকরা স্বর্ণের খোঁজ করে থাকে যেখানে শত শত জলাধারে পানি ভর্তি রয়েছে। এগুলো কাদা দিয়ে ঘেরা এবং গাছাপালা পরিষ্কার করে এগুলো তৈরি করা হয়েছে।
খনি শ্রমিকরা পুরনো নদীগুলো অনুসরণ করে যেখানে খনিজ পদার্থসহ পলি জমা হয়। এই অংশটি বানর, জাগুয়ার ও প্রজাপতিসহ অন্যান্য প্রাণির আবাসস্থল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন খনির খননই এই অঞ্চলের বন নিধনের প্রধান কারণ।
আন্দিজ আমাজন প্রকল্পের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় জানা যায়, ২০১৮ সালে সোনার খনির কারণে পেরুর আমাজনের ২২ হাজার ৯৩০ একর বন ধ্বংস হয়েছে। স্বর্ণের ক্রমবর্ধমান দাম বৃদ্ধি দেখে স্থানীয় দরিদ্র অধিবাসীরা এসব খনিতে কাজ করে অর্থ আয় করতে আগ্রহী হন। ২০১২ সালের হিসাবে মতে সে সময় এই অঞ্চলে ৩০ হাজার খনি শ্রমিক কাজ করত।
লা পামপা নামে পেরুর আরেক অংশে প্রায় একযুগ চলার পর ২০১৯ সালে সেখানকার সোনার খনির কাজ সরকারি আদেশে স্থগিত করা হয়। খনিতে কাজ করা পাঁচ হাজার শ্রমিককে তখন অব্যাহতি দেয়া হয়।