দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও তার ভাই।
দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তিন বারের এমপি ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার এবং তারই আপন ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দেন তারা। এর আগে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন তারা দুজনই । কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমানকে। এরপরই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন মাহবুব ও তার ভাই হাবিব।
এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুর রহমান জানান, ‘আমার বড় ভাই মাহবুবুর রহমান তালুকদার কিছু লোকের প্ররোচনায় প্রার্থী হয়েছেন। আমি মনে করি এটা তার ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি তিন বার এমপি ছিলেন, আমি তাকে সাপোর্ট দিয়েছি বিভিন্নভাবে। আমার সাপোর্ট না পেলে তিনি এত দূর এগুতে পারতেন না। এবার আমি আশা করেছিলাম।
যেহেতু তার শারীরিক অবস্থা ভালো না, তাই তিনি আমাকে সাপোর্ট দিবেন। কিন্তু তিনি কিছু সুবিধাবাদী লোকের প্ররোচনায় প্রার্থী হয়েছেন। এক শ্রেণীর লোক আছে, যারা মাহবুবুর রহমান তালুকদার এমপি থাকা অবস্থায় লুটপাট করে খেতে পেরেছে, ওইসব লোকেরাই এবারও তাকে প্রার্থী করেছেন।
যাতে আবারও লুটপাট করে টাকা পয়সা কামাতে পারেন। তবে আমি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব, এক পা পিছু হঁটবোনা।’ তবে দুই ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এলাকা জুড়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দুই ভাইয়ের কাড়াকাড়িতে ক্ষুন্ন হচ্ছে আওয়ামীলীগের ভাবমূর্তি।
তিন বারের এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ফলে দূর্নীতি দমন কমিশনে রয়েছে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা।
তাছাড়া কলাপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদের অর্থ ও মোজাহার উদ্দিন বিস্বাস ডিগ্রী কলেজের অর্থ আত্মসাত এর মামলার তদন্ত দুদকে চলমান। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তৈরি করেছিলেন নিজস্ব পেটুয়া বাহিনী। যাদের বিরুদ্ধে ভূমি দখল,চাঁদাবাজি,সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া দলীয় কর্মীদের সাথে বিরূপ ও আক্রমনাত্মক আচরন করেও একাধিকবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন সাবেক এই এমপি।
অনেকে আবার বলছেন, ক্ষমতার লোভে নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা তিনবার এমপি ও প্রতিমন্ত্রী হওয়া মাহবুবুর রহমান দীর্ঘ ৫২ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিলিয়ে দিয়ে আওয়ামীলীগের বিদ্রহী প্রার্থী হয়েছেন।যা দলের জন্য কলঙ্কজনক।
তবে এ আসনের সাধারণ মানুষ বলছেন, ১৯৭০ সাল থেকে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে এবং দলের শক্ত ঘাটি। এই এলাকার জনগণ বঙ্গবন্ধু, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা ও নৌকাকে ভালোবাসে। তাছাড়া এই এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজিরবিহীন উন্নয়নে কারনে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তাই ৭ই জানুয়ারী নৌকায় ভোট দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা। কে স্বতন্ত্র বা কে বিদ্রহী দাড়ালো জনগনের কাছে সেটি বিবেচ্য নয়। তারা নৌকায় ভোট দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব তালুকদার জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের জন্য মঙ্গল জনক নয়। যেখানে জাতীয় পার্টি এবং জাসদ নির্বাচন করছে সেখানে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী দলের জন্য বিপদজনক। যা আমারা কোনোভাবেই মানতে পারিনা।
রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান মামুন জানান, বিদ্রোহীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নেই । দল শক্ত অবস্থানে আছে । নৌকা ছাড়া অন্য কোন প্রতীকের পক্ষে কাজ করবেনা কেউ ।
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন ১১৪ পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলা এবং মহিপুর থানা) আসন।
এ আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ০৭ জন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীই ০৩ জন। মাহবুব-হাবিব দুই ভাই ছাড়াও অপর বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম লিটন ।
অন্যদিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমান। রয়েছে জাতীয় পার্টি, জাসদ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থীও।