এসএম দেলোয়ার হোসেন : রাজধানীর কলাবাগানে চাঞ্চল্যকর ইংলিশ মিডিয়াম মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্তে প্রধান অভিযুক্ত আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহানের বাসার সিসিটিভি’র ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আলামতও জব্দ করা হয়েছে। ঘটনার দিন কলাবাগানের ডলফিন রোডে দিহানের বাসায় একাই গিয়েছিলেন আনুশকা নূর আমিন। সিসিটিভি’র ফুটেজে দিহানের বাসায় আনুশকা অবস্থানকালে ওই বাসার সামনে সন্দেহজনকভাবে ৩ জনকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। ফলে তাদের আচরণ ও গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ঘটনার দিন থেকেই দিহানের বাসার দাড়োয়ান দুলাল মিয়া রহস্যজনভাবেই পালিয়ে যায়। গত ১০ জানুয়ারি রাতে কাজে যোগ দেন তিনি। পরদিন গত সোমবার সকালে তাকে মামলার সাক্ষী হিসেবে হেফাজতে নেয় পুলিশ। আজ মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার দিন গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগানের ডলফিন গলিতে ইফতেখার ফারদিন দিহানের বাসায় একাই গিয়েছিলেন মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিন। এমনকি ঘটনার পর দিহান একাই গাড়িতে করে আনুশকাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাসার ভেতরে ও হাসপাতালে যাওয়ার সময় দিহানের সঙ্গে আর কেউ ছিল না। পুলিশ হেফাজতে দিহানদের বাসার দারোয়ান দুলাল মিয়া পুলিশকে এসব কথা জানিয়েছেন। পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকেই রহস্যজনক কারনে পলাতক ছিলেন দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল মিয়া। গত ১০ জানুয়ারি রাতে কাজে ফেরেন তিনি। গত ১১ জানুয়ারি সকালে মামলার সাক্ষী হিসেবে দুলাল মিয়াকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। দুলাল মিয়া পুলিশকে জানায়, ঘটনার দিন সকাল থেকেই দিহানদের বাসার গেটে দায়িত্বরত ছিলেন দুলাল মিয়া। ওইদিন বাসায় দিহান ছাড়া আর কেউ নেই বলে সে জানত। আনুমানিক দুপুরের দিকে দিহানদের বাসায় একটি মেয়েকে সে যেতে দেখে। আনুশকা বাসার ভেতরে যাওয়ার আনুমানিক ১ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অচেতন অবস্থায় নিয়ে দিহান বের হয়ে আসে এবং গাড়িতে করে চলে যায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, আনুশকা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত দিহান ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে এর পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষী হিসেবে দুলালকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। দুলাল যেহেতু এ মামলার আসামি নয়, সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে মামলার তদন্তের প্রয়োজনে ফের তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
এদিকে আজ মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, চাঞ্চল্যকর এ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে দিহানের বাসার সিসিটিভি’র ফুটেজেসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। তিনি জানান, ঘটনার সময় ওই বাসায় প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান করে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ওই শিক্ষার্থী। সেখানে সন্দেহভাজন আরও ৩ জনকে দেখা গেছে। যাদের আচরণ বা গতিবিধি সন্দেহজনক। ধারণা করা হচ্ছে, তারাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজের বিষয়ে পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ওই শিক্ষার্থী প্রবেশ করে। বাসার সিঁড়ি ঘরের দিকে সে যায়। দুপুর ১টার দিকে বাসার সামনে ৩ ব্যক্তির রহস্যজনক গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। ১টা ৩৬ মিনিটে গাড়িতে করে দিহান বাসা থেকে বের হন। ওই ৩ ব্যক্তি বাসার সামনে নজরদারি করেন। পুলিশ আরও জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই তিনজনের দেওয়া তথ্য এবং আটক দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল মিয়ার দেওয়া তথ্যের মিল রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে তাদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদিকে দুই-একদিনের মধ্যেই মামলার প্রধান অভিযুক্ত আসামি দিহানের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি সকালে বন্ধু দিহানের মোবাইল কল পেয়ে বাসা থেকে বের হন রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিন। ওইদিন প্রায় দুপুরের দিকে ফাঁকা বাসায় তাকে ধর্ষণ করা হয়। এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহানসহ ৪ বন্ধু তাকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে খবর পেয়ে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল থেকে ওই শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ধর্ষণের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর পরই গ্রেফতার করা হয় দিহানকে। দোষ স্বীকার করে তিনি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।