ফারুকুল ইসলাম, সোনারগাঁও থেকে
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় সুইট লেডি পেঁপের চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া চৌধুরীপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম। পেঁপে ভালোবাসে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। হোক তা কাঁচা বা পাকা। সবজি জাতীয় এ ফলের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ ফলের চাহিদাও অনেক। পেঁপে চাষে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা মেটায় অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভাবেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়। তেমনি এক সফল চাষী আমিনুল ইসলাম। ৭ বছর সৌদি আরব প্রবাস করে দেশে ফিরে কোন উপায়ন্ত না দেখে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কৃষি কাজ। ১৫ হাজার টাকা খরচ করে গড়ে তোলা পেঁপে বাগান থেকে। এরই মধ্যে লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করা হয়েছে। আরও পেঁপে বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি। এতে করে ১ বছরে খরচ বাদে তার লাভ হবে প্রায় ২ লাখ টাকা। সফল এ চাষী মো. আমিনুল ইসলামের মুখে এখন ফুটেছে হাসি। তার সফলতা দেখে গ্রামের অনেকেই পেঁপে বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
সারি সারি পেঁপে গাছ। প্রতিটি গাছে অসংখ্য কাঁচা পেঁপে ঝুলে আছে। গাছ থেকে পেঁপে তুলে বিক্রি করলেও গাছের পেঁপে যেন শেষই হচ্ছে না। বাড়ির পাশে অন্যের ২২ শতাংশ জমিতে পেঁপে চারা রোপণ করে তিনি এ পেঁপে বাগান গড়ে তুলেছেন। পেঁপে চাষী আমিনুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে তিনি প্রথম পেঁপে চাষ করেন। তখন ছিল কম। পরে সৌদি আরব চলে যাই। সৌদি থেকে ফিরে আবারও পেঁপে চাষ শুরু করি। এ বছরও ব্যাপকভাবে পেঁপে চাষ করি। ২২ শতাংশ জমি অন্যের কাছ থেকে বাৎসরিকভাবে ভাড়া নিয়ে প্রায় ২৭১টি পেঁপে চারা রোপন করি। চারা রোপণের পর নিয়মিত পরিচর্যা ও সার-সেচ দেওয়ায় প্রতিটি গাছে ফলন আসে ৭০ থেকে ৮০টিরও অধিক পেঁপে। পরিপূর্ণ অবস্থায় প্রতিটি পেঁপের ওজন হয় প্রায় ২ কেজি। সর্বোচ্চ একটি পেঁপের ওজন হয় ৩ কেজি। স্থানীয় অনেক পাইকার ও ব্যবসায়ীরা তার বাগান থেকে কাঁচা ও পাকা পেঁপে নিতে আসেন। তিনি আরও বলেন, চারা লাগানোর ৩ মাসের মাথায় গাছে ফল ধরলেও তা ছিঁড়ে দেই। পরে আবারও ফল ধরলে ৮ মাসের মাথায় গাছ থেকে পেঁপে তোলা শুরু করি। বাজারে কাঁচা পেঁপের তুলনায় পাকা পেঁপের চাহিদা বেশি। দামও বেশ ভালো। তার নিজের বাগান থেকে পেঁপে বীজ সংগ্রহ করা হয়। তার বাগানে পেঁপে বেশ সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, পেঁপে বিপণন ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হওয়া উচিত। বিশেষ করে ব্যাপকভাবে বাজারজাত করা গেলে স্থানীয় কৃষক পেঁপে চাষে আগ্রহী হবে। তিনি তার বাগানের পেঁপে ঢাকা নারায়ণগঞ্জের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। ঢাকার শনিআখড়ায় তিনি পেঁপে বিক্রি করেন। স্থানীয় অনেকে তার বাগান থেকে পেঁপে নিয়ে যান। তিনি আগামীতে আরো দ্বিগুণভাবে এ পেঁপে চাষ বাড়ানোর কথা জানান। তিনি আরও বলেন, এ পেঁপে চাষে কোন প্রশিক্ষণ নেননি। তিনি নিজে নিজে এ পেঁপে চাষ শিখেছেন। বাগান পরিচর্যা তিনি নিজেই করেন। তিনি জানান, বাগানে পেঁপে গাছের চারা রোপণের সময় সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হলেও এখন সম্পূর্ণ জৈব সারই ব্যবহার হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষি অফিস তাকে সব সময় সহযোগিতা করেন। তারা পরামর্শ দেন, সার, কীট নাশক প্রদান করেন।
পেঁপে চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন আমিনুল। তিনি সফলও হয়েছেন। আমিনুলের সফলতা দেখে গ্রামের অন্যরাও পেঁপে চাষে উৎসাহ হয়ে পেঁপে বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অনেকেই সফল হয়েছেন। আমিনুল ইসলাম জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা যায়। পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের অনেক বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, বেকার যুবকরা যদি চাষে অগ্রসর হয় তাহলে তারাও লাভবান হবে। তিনি এ পেঁপে চাষ করে খুব অল্প সময়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সোনারগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার জানান, এই উপজেলায় যেভাবে পেঁপের চাষ হচ্ছে, তা যদি আমরা পরিকল্পিতভাবে মাঠ পরিদর্শন বা মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের জমায়েত করে অন্যান্য উপজেলায়ও ছড়িয়ে দিতে পারি, তাহলে উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
