নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের বন্যা-দুর্যেোগপ্রবণ এলাকায় অভিনব ভাসমান স্কুল কার্যক্রমের প্রবর্তক স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান ‘ক্লাইমেট রেবল’ (জলবায়ু সংগ্রামী) স্বীকৃতি পেয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রকাশনা সংস্থা পেঙ্গুইন র্যানডম হাউজ থেকে প্রকাশিত ‘ক্লাইমেট রেবলস’ বইতে তাকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিগত দুই শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী যারা পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় সংগ্রাম করেছেন সে রকম ৪১ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে এ সংকলন। ‘সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
‘ক্লাইমেট রেবলস’ বইতে বাংলাদেশের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানসহ আরো যাদের কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন— জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবাগ; গ্রিন বেল্ট মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ও ২০০৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ওয়াংগারি মাথাই; বিশ্বের অন্যতম দৃশ্যমান পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীনপিসের প্রতিষ্ঠাতাগণ; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পার্কের জনক ও উনিশ শতকে বনজ সম্পদ রক্ষায় আন্দোলনকারী জন মিওর; এবং ৭৪টি দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ফ্রেন্ডস অফ দ্যা আর্থ ইন্টারন্যাশনাল অন্যতম।
পেঙ্গুইন র্যানডম হাউজ ‘ক্লাইমেট রেবলস’ সম্পর্কে লিখেছে -‘বইটি আপনাকে উওর/দক্ষিণ মেরু, মহাসাগর ও রেইনফরেস্টে নিয়ে যাবে। এর গল্পগুলো প্রমাণ করে যে, একজন ব্যক্তির ছোট ছোট প্রচেষ্টাগুলো ধীরে ধীরে বড়, শক্তিশালী ও বিশ্ব-পরিবর্তিত উদ্যোগে পরিণত হতে পারে।’
রেজোয়ান সম্পর্কে বইটির লেখক বেন লারউল লিখেছেন, ‘বন্যা বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা এবং এটা মানুষের জীবন আরও কঠিন করে তুলেছে। শিশুরা যাতে নিয়মিত লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য মোহাম্মদ রেজোয়ান একটি চমৎকার ধারণা নিয়ে এসেছেন। তিনি নৌকাকে স্কুলের শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর এই উদ্যোগ সফল। যার ফলশ্রুতিতে তার দেশে এখন নৌকা স্কুল ছাড়াও ভাসমান গ্রন্থাগার, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও ভাসমান প্লেগ্রাউন্ড কাজ করছে।’
রেজোয়ানের প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা’ বন্যাপ্রবণ এলাকায়, বিশেষ করে যেখানে শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নেই, সেখানে শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিতকরণে দৃষ্টান্তমূলক ভুমিকা পালন করছে। রেজোয়ান ২০০২ সালে চলনবিলে ভাসমান স্কুল প্রবর্তন করেন, এবং অন্যান্য সংস্থা তাঁরই নৌকা স্কুলের অনুরুপে ২০১০ সাল পরবর্তী সময়ে নৌকায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। তাঁর নৌকাস্কুলের ধারণাটি জাতিসংঘের ফান্ডস্ অ্যান্ড প্রোগ্রামস্ (ইউনিসেফ, ইউএনইপি এবং ইউএনডিপি) থেকে ইনোভেশন-এর স্বীকৃতি পেয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের আটটি দেশে সিধুলাই-এর অনুরুপ ভাসমান স্কুল কার্যক্রম পরিচালিত।
২০১৯ সালে বৃটিশ বই “আর্থ হিরোজ” রেজোয়ানকে বিশ্বের ২০ জন আর্থ হিরোর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। রেজোয়ান ও তাঁর ভাসমান স্কুলকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণীর পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সম্পর্কে মোহাম্মদ রেজোয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আমাদের জনগণকে বন্যা ও ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড়ের মধ্যে সংগ্রাম করতে দেখেছি, সর্বদাই তারা নিজেদেরকে দুর্যোগের পূর্বের অবস্থায় নিয়ে এসে নতুন করে জীবন শুরু করেছে। তাদের এই সংগ্রামী বৈশিষ্ট্য আমাকে শিশুদের জন্য ভাসমান স্কুল ডিজাইন করতে অনুপ্রাণিত করেছে। এখনকার সময়ে বন্যা আরও অনিশ্চিত। আমাদের নৌকা স্কুল এই পরিবেশগত সমস্যার একটি সমাধান, তবে এখনও আরো অনেক কিছুই করার আছে।’