প্রতি বছরের মে ও অক্টোবর মাসে পালিত বিশ্ব পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি দিবস বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে পরিযায়ী পাখিদের জন্য এক অনন্য আশ্রয়স্থল। তবে ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, জলাভূমি দখল ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আজ এই পাখিদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখিদের বর্তমান অবস্থা ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশে অতিথি পাখির অবস্থান
বাংলাদেশে প্রায় ৩৭০ প্রজাতির পাখির মধ্যে ১৫০টিরও বেশি পরিযায়ী প্রজাতি। প্রতিবছর শীত মৌসুমে সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও হিমালয় অঞ্চল থেকে হাজার হাজার পাখি আমাদের জলাভূমিতে আসে। হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, সুন্দরবন, বাইক্কা বিলের মতো স্থানগুলোতে এসব পাখির সমাগম ঘটে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ পরিযায়ী পাখিদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থলগুলোর একটি।
অতিথি পাখিদের বর্তমান হুমকি
আবাসস্থল ধ্বংস: অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও কৃষি সম্প্রসারণের ফলে প্রতিবছর হারিয়ে যাচ্ছে পাখিদের বসবাসের স্থান।
অবৈধ শিকার: স্থানীয় কিছু মানুষের মধ্যে পাখি শিকারের প্রবণতা এখনও বিদ্যমান।
জলবায়ু পরিবর্তন: বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পাখিদের অভিপ্রায়ণ পথে পরিবর্তন আসছে।
দূষণ:প্লাস্টিক ও রাসায়নিক দূষণ পাখিদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
অতিথি পাখি সংরক্ষণ প্রচেষ্টা
বাংলাদেশ সরকার পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
– টাঙ্গুয়ার হাওরকে রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা
– হাকালুকি হাওর সংরক্ষণ প্রকল্প
– বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ প্রণয়ন
– বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি
অতিথি পাখি প্রস্তাবিত পদক্ষেপ:
আইনের কঠোর প্রয়োগ:পাখি শিকার ও পাচার রোধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
জলাভূমি সংরক্ষণ:পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ সব জলাভূমি সংরক্ষণ করা।
গবেষণা বৃদ্ধি: পরিযায়ী পাখিদের গতিবিধি ও বাস্তুতন্ত্র নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
সচেতনতা সৃষ্টি: স্কুল-কলেজ ও স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন।
পরিযায়ী পাখি আমাদের প্রকৃতির অপরিহার্য অংশ। এদের সংরক্ষণ শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের জন্যও জরুরি। বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবসে আসুন আমরা সবাই পাখি সংরক্ষণের অঙ্গীকার করি এবং প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসি। সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে সমন্বিত প্রচেষ্টাই পারে পরিযায়ী পাখিদের জন্য একটি নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করতে।
লেখক:
শেখ শাহরুখ ফারহান
পরিবেশ গবেষক ও প্রকৃতি সংরক্ষণকর্মী