ইমরুল হাসান বাবু, টাঙ্গাইল থেকে:
যত দূর চোখ যায়, ছড়িয়ে আছে সরিষার ক্ষেত। দিগন্তজুড়ে মন কাড়া রংয়ের খেলা। এমন হলুদ প্রকৃতিতে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌচাষি। শীত মৌসুম এলেই মৌচাষি তাদের মৌ বাক্স নিয়ে চলে আসেন সরিষার দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদন অঞ্চল টাঙ্গাইলে। এ বছর টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর, ঘাটাইল, গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, সদর, সখিপুর, বাসাইল, নাগরপুর, দেলদুয়ার, মির্জাপুর উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার মৌ বাক্স বসানো হয়েছে। প্রতি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৬ থেকে ১০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। এ মৌসুমে মৌচাষিরা প্রায় একশ টন মধু সংগ্রহ করার আশা করছেন।
জানা যায়, মৌমাছিকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করে মৌচাষী। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় মৌমাছি তাদের পা এবং বুকের লোমে ফুলের অসংখ্য পরাগরেণু বয়ে বেড়ায়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে পড়লে পরাগায়ন ঘটে। যার ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন হয় ফল। এভাবে মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়নের ফলে উদ্ভিদকূল বংশ-বিস্তার করে থাকে। শীত মৌসুমে যখন প্রকৃতিতে ফুলের আগমন ঘটে তখন মৌমাছিসহ বাক্সটিকে সেখানে স্থানান্তর করলে একদিকে প্রচুর মধু সংগৃহীত হবে এবং ফল বা ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের সময় সাধারণত চাকটিকে নষ্ট করে ফেলা হয়। এ কাজের সময় অনেক ক্ষেত্রে অসংখ্য মৌমাছিও মারা পড়ে। এছাড়া চাকে থাকা ডিম ও বাচ্চা নষ্ট হয়। ফলে দিন দিন মৌমাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ইদানিং ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে লোকালয়ে আশঙ্কাজনকভাবে মৌমাছির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এতে করে ফলনও কমে যাচ্ছে। মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মৌমাছির সংখ্যাকে বাড়ানো সম্ভব। টাঙ্গাইলের মৌচাষিরা জানান, প্রতি বক্সে ৪ থেকে ৫ কেজি এবং মাছি যদি ভাল হয় তাহলে ৬ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। এই মধু স্কয়ার, এপি ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানি নিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে মধু সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া খুচরা ভাবেও মধু বিক্রি হয়। সরিষা চাষিরা জানান, মৌ খামারিরা আসলে আমাদের শস্য আরও বৃদ্ধি হয়, ফলন ভাল হয়। সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্স বসানোতে লাভবান হচ্ছেন তারা।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আহ্সানুল বাসার জানান, মৌমাছির বিচরণের মাধ্যমে সরিষার ফুল সহ অন্যান্য ফুলেও পরাগায়ন বৃদ্ধি পায়। পরাগায়ন বৃদ্ধি পেলে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সরিষার ফলন বেড়ে যায়। সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহের পাশাপাশি সরিষারও ভাল ফলন পাওয়া যাচ্ছে। দুই মিলে স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে চাষী ও মধু সংগ্রহকারীদের মধ্যে।
