নগরীর রাস্তা-ঘাটে, দোকান-পাটে কোথাও বসতে পারি না, কোথাও দাঁড়াতে পারি না, আড্ডা দিতে পারি না, পাঁচ মিনিটের জন্য বসলেই ১০-১৫টা মশা কামড়িয়ে রক্তচোষে নেয়। ঘরে বাইরে সব জায়গায় মশা আর মশা। গরম আসার আগেই মশার যন্ত্রণায় জনজীবন অতিষ্ঠ। এমন অভিযোগ করেন পল্টনের বাসিন্দা অসীমা জাহান ডোনা।
মশার যন্ত্রণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, গরমকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মশার উপদ্রব এতো পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে যে, আমাদের দৈনন্দিন কাজ করাটাই দায় হয়ে পরেছে। কয়েল, স্প্রে বা মশারি টাঙিয়েও মশার উৎপাত থেকে রেহাই মিলছে না।
শুধু ডোনার পরিবার নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে তারাও মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। তারা বলেন, দিন শেষ হতে না হতেই কানের কাছে মশার শোঁ শোঁ শব্দ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে বসতে পারে না। ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটে।
এছাড়া মশার উৎপাতে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশুনাতেও চরম ব্যাঘাত ঘটছে। এ বিষয়ে তাদের অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, সারাদিন মশার উপদ্রব থাকলেও সন্ধ্যার পর পরই এর মাত্রা আরো কয়েকগুন বেড়ে যায়। ফলে সন্ধ্যায় মশার কয়েল জ্বালিয়ে বা মশার ওষুধ স্প্রে করে শিক্ষার্থীদের পড়তে বসতে হয়। এমনকি মশার উৎপাতে নাজেহাল হয়ে মশারি টাঙিয়েও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকই মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজধানীর মতিঝিল এলাকার বাসিন্দা মো. আরমান হোসাইন। তিনি বলেন, মশার সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। বাইরের দোকান, রাস্তাঘাট এমনকি বাসেও মশা লাগছে। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। বাড়িতে রাতে না হয় মশারি টাঙিয়ে ঘুমালাম কিন্তু অন্য সময় মশার অত্যাচারের সমাধান করব কীভাবে?
জ্যেষ্ঠ এ নাগরিক বলেন, রাজধানীতে মশার নিয়ন্ত্রণ করা তো দুই সিটি করপোরেশনের কাজ, কিন্তু তারা করছেটা কী? এখন কোথাও তাদের কার্যক্রম দেখতে পাচ্ছি না।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অবশ্য বলছে, মশা নিয়ন্ত্রণে তাদের অভিযান, জরিমানা, মনিটরিং, সচেতনতা সৃষ্টির কাজ অব্যাহত আছে। মশা নিধনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কেবল কীটনাশকের জন্য ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ২২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া এবার মশক নিধনে ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সেখানে মশার ওষুধ-বাবদ ৪০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা, ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনে চার কোটি টাকা, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ২৫ কোটি টাকা এবং মশক নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযানে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখ হয়েছে। সবমিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশা মারতে ৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এত টাকা বরাদ্দ করেও নগরবাসীকে মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারছে না দুই সিটি করপোরেশন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছে, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই তিন মাস পর্যন্ত মশা বংশবিস্তার ঘটায়। এ সময় মশাবাহিত রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এজন্য সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তারা।