নিজস্ব প্রতিবেদক : নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ এর সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ সংগঠনটির শীর্ষ ৫ জঙ্গি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল সেট, ভিসা কার্ড ও কারাবন্দিদের কাছে টাকা প্রদানের স্লিপ উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নিষিদ্ধ এ জঙ্গি সংগঠনটির সেকেন্ড ইন কমান্ড শেখ কামাল হোসেন (৩৫), মো. সোহেল রানা (৪০), রবি আহমেদ পাপ্পু (২৮), মো. খালেকুজ্জামান (৩৭) ও মনিরুজ্জামান ওরফে মিলন (৪২)। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি,২০২১) গণমাধ্যমে পাঠানো পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশের এটিইউ’র ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি,২০২১) সন্ধ্যা ৬টার দিকে গোপন সংবাদে তেজগাঁও থানাধীন ফার্মগেইট তেজতুরী বাজারস্থ প্যাসিফিক হোমস টাওয়ারের নিচতলায় অভিযান চালায় পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের একটি দল। এ সময় সেখান থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ এর দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন- সংগঠনটির সেকেন্ড ইন কমান্ড শেখ কামাল হোসেন (৩৫)। তিনি খুলনার পাইকগাছা থানার দেবদুয়ার গ্রামের বাসিন্দা মো. শেখ আইয়ুব হোসেনের ছেলে। গ্রেফতার অপরজন হলেন- সংগঠনের নির্বাহী মো. সোহেল রানা (৪০)। তিনি বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া থানার বরিয়ালি গ্রামের বাসিন্দা আজহারের ছেলে।
এটিইউ জানায়, গ্রেফতারকৃত দু’জনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার (৩ ফেব্রæয়ারি,২০২১) রাত ৮টার দিকে মোহাম্মদপুর থানাধীন কাটাসুর এলাকার শেরেবাংলা রোডে অভিযান চালায় পুলিশের এটিইউ’র অপর একটি দল। সেখান থেকে সংগঠনের আরও ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে এটিইউ। এরা হলেন- সংগঠনটির বিভাগীয় নায়েক রবি আহমেদ পাপ্পু (২৮)। তিনি নাটোরের গুনানী গ্রামের বাসিন্দা কুতুবউদ্দিনের ছেলে। অপরজন হলেন- সংগঠনটির দাওয়াহ্ দপ্তরের প্রধান মো. খালেকুজ্জামান (৩৭)। তিনি পাবনার আমিনপুর নিবাসী শামসুর রশিদের ছেলে। আরও একজন হলেন- আল্লাহর দলের নির্বাহী মনিরুজ্জামান ওরফে মিলন (৪২)। জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলাকালে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন, ভিসা কার্ড ও কারাবন্দিদের টাকা প্রদানের স্লিপ ও ৩৭ হাজার ৬২ টাকা উদ্ধারমূলে জব্দ করেছে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট।
এটিইউ আরও জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শেখ কামাল হোসেন ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত আল্লাহর দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড (সহ-অধিনায়ক) দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি ২০০৪ সালে আল্লাহর দলের প্রধান মতিন মেহেদীর নিকট শপথ গ্রহণ করে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত খুলনা জেলায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা জেলায় এবং ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রের বিভিন্ন পদে দায়িত্বে ছিলেন। গ্রেফতার খালেকুজ্জামান ২০০০ সালে মতিন মেহেদীর মাধ্যমে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। তিনি ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলায়, ২০১৭ সাল থেকে গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা জেলার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে তিনি কেন্দ্রের দাওয়াহ্ দপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। মো. মনিরুজ্জামান ওরফে মিলন আল্লাহর দল এর প্রধান মতিন মেহেদীর ভাগ্নে। ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি মতিন মেহেদীর একান্ত সহযোগী হিসেবে আল্লাহর দলের বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। আর মো. সোহেল রানা ২০১৮ সালে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। তারা আল্লাহর দলের গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতে মামলরা বিষয়াবলী দেখাশোনা, কারাবন্দি ও তাদের আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ পূর্বক সহযোগিতায় নিয়োজিত ছিলেন। রবি আহাম্মেদ পাপ্পু ২০১৮ সালে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে গাজীপুর জেলায় বিভাগীয় নায়েক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল।
এটিইউ’র বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গ্রেফতারকৃতরা দেশের বর্তমান নির্বাচনী ও ভোটাধিকার ব্যবস্থা বিশ্বাস করে না এবং সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে তারা শয়তানের দল বলে অভিহিত করে, তারা দেশের সংবিধান ও জাতীয় সংসদকে স্বীকার করে না। তারা নিজেরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে না এবং অন্যকেও ভোটাধিকার প্রদানে নিরুৎসাহিত করে। তারা নারী নেতৃত্বে বিশ্বাস করে না এবং প্রচলিত যাকাত ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে, তাদের মতাদর্শের সদস্যের নিকট থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা উত্তোলন করে দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করে। তারা ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তাদের আদর্শের অনুকুলে সদস্য সংগ্রহ ও চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে বিপথগামী করা, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘আল্লাহর দল’ সংগঠনের ব্যানারে এসব চক্রান্তমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানার মামলা নং-১৪, তারিখ-০৪/০২/২০২১ খ্রি. সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী/২০১৩) এর ৬(২)/৮/৯(৩)/১০/১১/১২ ধারা রুজু করা হয়েছে বলেও এটিইউ’র ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
দেশ–বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন।