ওমর ফারুক, রাজশাহী ব্যুরো:
রাজশাহী মহানগরীতে নিজেদের আনা অ্যাম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে যেতে স্বজনদের বাধা ও ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় স্থানীয় রোগী ও লাশবাহী গাড়ীর দালাল ও চাঁদাবাজসহ ৭ জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। দালাল ও চাঁদাবাজরা মৃতের স্বজনদের নিজেদের অ্যাম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে যেতে বাধ্য করার চেষ্টা করে ও তাদের অ্যাম্বুলেন্সে না নিয়ে গেলে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এসব দালাল চাঁদাবাজরা দীর্ঘদিন ধরে বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের জিম্মি করে চাঁদাবাজি করে আসছে। এনিয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনের অভিযোগ থাকলেও দালাল ও চাঁদাবাজরা আগে তেমন আটক হয়নি। সম্প্রতি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দালাল ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুরিশ। এ অভিযানকে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও রোগীর লোকজন সাধুবাদ জানিয়েছেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩ টার দিকে নগরীর রাজপাড়া থানাধীন লক্ষীপুর এলাকায় অবস্থিত বেসরকারী সিডিএম হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়নাল আবেদীন নামের একব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন। সেই মৃত ব্যক্তির স্বজনরা হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে লাশটি নিজ বাড়ি মেহেরপুর জেলায় নেওয়ার জন্য নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সময় লাশ বহনকারী গাড়ীর স্থানীয় চাঁদাবাজ ও দালাল চক্রের সদস্য রাজপাড়া থানার লক্ষীপুর প্যারামেডিকেল রোড এলাকার মৃত মোসলেম খানের ছেলে আব্দুল্লাহ (৩২) ও নগরীর দাসপুকুর বৌবাজার মসজিদের পাশের মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে রাজন (৩৫) লাশের আত্মীয় স্বজনদের লাশ নিয়ে যেতে বাধা দেয়। এরপর তারা রোগীর স্বজনদের বলে, এখান থেকে লাশ নিজ এলাকায় নিয়ে যেতে হলে রাজশাহীর অ্যাম্বুলেন্সেই নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় নিজেস্ব অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে চাইলে আমাদের স্থানীয় লাশ বহনকারী মাইক্রো সমিতিকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে।
চাঁদাবাজ ও দালালদের বাধার মুখে অসহায় হয়ে পড়ে মৃতের স্বজনরা মহানগর গোয়েন্দা শাখায় সংবাদ দিলে ঘটনার পরপরই নগর ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবির একটি দল অভিযান চালিয়ে ওই দুই চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রামেক হাসপাতাল ও বে-সরকারী হাসপাতাল এবং ক্লিনিক থেকে লাশ বহনকারী গাড়ীর সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ ও দালাল চক্রের অপর সদস্য বাদশা (৪০), এমদাদুল হক (৪০), বিপ্লব (৫০), জাহিদ হাসান (২৬) ও জানারুল ইসলাম (২৮) কে গ্রেফতার করে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, পুলিশের হাতে আটককৃতদের মধ্যে বাদশা অন্যতম লাশবাহী গাড়ীর দালাল ও চাঁদাবাজ। হাসপাতালের সামনে যত মাইক্রোবাস আছে তা নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষ মারা গেলেই তার নের্তৃত্বে চক্রের কাজ শুরু হয়। কম রাস্তার ভাড়াও দুই থেকে তিনগুণ চাওয়া হয়। অন্যথায় চাঁদা দাবি করা হয়। দিতে না চাইলে মারমুখি আচরণ করা হয়। অবশেষে তাদের দালালদের নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে লাশ বা রোগী নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। মূলত এ চক্রটি বেপরোয়াভাবে রোগী ও মৃতের স্বজনদের জিম্মি করে বেশি টাকা আদায় করে। এ অবস্থায় রোগীর স্বজনদের পক্ষ থেকে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষরা এ অভিযান অব্যাহত রাখার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যাতে আর কাউকে হেনস্থার শিকার না হতে হয়।
