বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির সাজা হবে কি না- সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে আজ ।
বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি রায়ের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করে দেন।
১৫ মাস আগে পুরো বাংলাদেশকে স্তম্ভিত করে দেওয়া ওই হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল, তাদের মধ্যে ১০ জনের বিচার চলে জজ আদালতে।
বাকি ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বরগুনার শিশু আদালতে আলাদাভাবে তাদের বিচার চলছে।
এ মামলার ১ নম্বর আসামি রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩) বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। আর নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নি (১৯) অভিযোগপত্রের ৭ নম্বর আসামি, যার নাম এ মামলার এজাহারে ছিল এক নম্বর সাক্ষী হিসেবে।
প্রাপ্তবয়স্ক বাকি আট আসামি হলেন- আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), হাসান (১৯), মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুন (২১)।
এদের মধ্যে মুসা পলাতক, মিন্নি আছেন জামিনে। বাকিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ৭৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর এই রায় হচ্ছে।
অল্প সময়ে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করায় সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি রায়ে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে বলে আশা করছেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ।
সাক্ষী থেকে আসামি হয়ে যাওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরও ন্যায্যবিচার প্রত্যাশা করছেন। তিনি এখনও বলছেন, তার মেয়েকে এই মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেছেন, তারা প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য, নানা তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন। তাই তারা আশা করছেন, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তিই হবে।
মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেছেন, তারা যে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন, তাতে মিন্নি বেকসুর খালাস পাবেন বলে তারা আশাবাদী।
যুক্তিতর্ক
এ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে মিন্নিকে নির্দোষ দাবী করে আটটি যুক্তি দেন তার আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম ও ফারুক আহম্মেদ।
তারা দাবি করেন, হামলার পর গুরুতর আহত রিফাত শরীফ একা একা হাসপাতালে গিয়েছিলেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে মিন্নি নিজেই রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
শুনানিতে মিন্নির আইনজীবী বলেন, রিফাতের ওপর হামলার সময় রাম দা হাতে হামলাকারী নয়ন বন্ডকে জাপটে ধরে রিফাতকে বাঁচানোর জন্য মিন্নি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। এ মামলার ১৩ জন সাক্ষী প্রত্যেকেই সে কথা বলেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মিন্নির উপস্থিতিতে বরগুনা সরকারি কলেজ মাঠে হত্যা পরিকল্পনার বৈঠকের কথা বলা হয়েছে। ওই এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকার পরও সেই বৈঠকের কোনো ভিডিও পুলিশ দেয়নি, সে বিষয়টি বিচারকের কাছে তুলে ধরেন মিন্নির আইনজীবী।
তারা বলেন, পুলিশ মিন্নির ওপর ‘নির্যাতন চালিয়ে’ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করেছিল।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে নয়ন বন্ডের বাসা থেকে মিন্নির ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র উদ্ধারের কথা বলা হলেও সেগুলোর কোনো ফরেনসিক প্রতিবেদন নেই বলে যুক্তি দেন আইনজীবীরা।
তারা বলেন, মামলা হওয়ার পর মিন্নির বাবার বাসা থেকে রিফাতের রক্তমাখা মিন্নির জামাকাপড় উদ্ধার করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়নি।
যুক্তি-তর্কের শেষ দিন এসব যুক্তি খণ্ডন করে পাল্টা যুক্তি দেন বাদী পক্ষের আইনজীবী এম মুজিবুল হক কিসলু।
তিনি বলেন, রিফাতকে হত্যা করা হয়েছে ‘মিন্নির পরিকল্পনায়’, সে জন্য তার ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ হওয়া উচিৎ।
এদিন বাদীপক্ষ মিন্নির জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করলেও শুনাশি শেষে বিচারক আইনজীবীর জিম্মায় জামিন বহাল রাখেন।