আব্দুস সালাম, চিরিরবন্দর থেকে:
বাইরে থেকে দোকান বন্ধ থাকলেও ভেতরে ক্রেতা সমাগম। শাটার অর্ধেক খোলা রেখে দোকান চলে; পুলিশ, প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেলেই টপাটপ শাটার বন্ধ করে দেয়। লকডাউনের ৫ম দিনে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীদের এমনই নানা কৌশলে দোকান খোলা রাখতে দেখা গেছে। সোমবার সকাল থেকে উপজেলা সদর, আমবাড়ি, আমতলী, রাণীরবন্দর, ভুষিরবন্দর বাজারের অধিকাংশ দোকানে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এতে করে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এলাকার সুশীল সমাজের লোকজন। এদিকে ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বর ভয়ে পরীক্ষা করছে না সাধারণ মানুষ। চিরিরবন্দরে প্রতিদিন যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে এখনই সচেতন না হলে, ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে। বাজারে এমনিতেই জ্বর, সর্দি, কাশি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সবাইকে এখনই সচেতন হতে হবে। চিরিরবন্দর পুলিশ স্টেশনের ওসি সুব্রত কুমার সরকার বলেন, চলমান লকডাউন সফল করতে আমরা কাজ করছি। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীদের সরকারি বিধিনিষেধ মেনে সর্বোচ্চ সচেতন থাকার জন্য চিরিরবন্দর থানা ও উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছি। চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা সিদ্দীকা বলেন, আমরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। করোনা বেড়ে যাচ্ছে, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সচেতন হতে হবে। কারও ঘরে যদি খাবার না থাকে ৩৩৩ নম্বরে কল করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে খাবার পৌঁছে দেবো।
উপজেলায় বর্তমানে আশঙ্কাজনক হারে জ্বর, সর্দি ও কাশির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলায় মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে ছিল ১৬ জনের শনাক্ত হয়েছেন ৫ জন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সব বয়সী লোকজন জ্বর, সর্দি ও কাশির রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত হওয়া বেশির ভাগ রোগী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে গড়ে ওঠা ফার্মেসিগুলোয় প্যারাসিটামল, নাপা, অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি অনেকে গোপন রেখে পারিবারিকভাবে সতর্ক থেকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করে আসছেন। হোম কোয়ারেন্টিন ও বাড়ি লকডাউন পরিস্থিতি এড়াতে এবং করোনা আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষা করাতে চান না তারা। এতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে হঠাৎ করে উপজেলার রাণীরবন্দর, ঘুঘুড়াতলীসহ বিভিন্ন এলাকার নানা বয়সী লোকজনের জ্বর, সর্দি ও কাশি দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে আসছেন। আবার অনেকে গোপনীয়ভাবে ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাচ্ছেন। করোনার ভয়ে লোকজন টেস্ট করাচ্ছেন না। আর যারা করাচ্ছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাব্বির হায়দার বলেন, করোনা রোগীকে অবহেলা করার কিছু নেই। যারা করোনা শনাক্ত হবেন, তাদের পরিবারের চিকিৎসা এবং সার্বিক সহায়তা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে। ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বর থেকেও ভয়ে টেস্ট না করে বসে থাকা যাবে না। উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহযোগিতায় উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন থেকেই নমুনা সংগ্রহ বা আমাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তা ছাড়া সাধারণত আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সর্দি-কাশি, জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। যেহেতু সময়টা ভালো যাচ্ছে না তাই যারা জ্বরসহ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের যত্রতত্র ঘোরাঘুরি না করা ভালো। তা ছাড়া ঘরে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকার পাশাপাশি তরল জাতীয় খাবার ও বিভিন্ন ফলমূল খাওয়া এবং চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিতে হবে।