আব্দুল লতিফ স্যার যিনি গোপালপুর এবং মধুপুর আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে এবং সার্বিক সমাজ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেই স্বনামধন্য শিক্ষকের উপাধি পেয়েছেন। তিনি তার শিক্ষকতার ৩৮ বছর জীবনে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর মনে প্রজ্জ্বলিত করেছেন জ্ঞানের প্রদীপ। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষক শিক্ষার্থীর মেরুদন্ড, আব্দুল লতিফ স্যার হলেন তার মডেল।
গোপালপুর এবং মধুপুর উপজেলায় যারা শিক্ষা ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র, জীবন্ত কিংবদন্তি জনাব মোঃ আব্দুল লতিফ স্যার। তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে সুদীর্ঘ ২০২৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষার সাথে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছেন। তিনি গোপালপুর উপজেলার হাদীরা গ্রামে ২৫-১০-১৯৫৯ সালে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতার নাম মাজম আলী, মাতার নাম খতিমন নেছা। সাত ভাই বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ।
১৯৬৪ সালে হাদীরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়।প্রাইমারি পাসের পর পানকাতা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই বছর পড়াশোনার করেন, পরে তার নিজ গ্রামে হাতেম আলী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার হলে সেখানে ফিরে আসেন এবং এখান থেকে তিনি ১৯৭৫ সালে এসএসসি পাস করেন। ধনবাড়ি কলেজ থেকে ১৯৭৯ এস এইচ সি এবং ১৯৮৪ সালে ডিগ্রী পাস করেন।
উল্লেখ্য লতিফ স্যার যেমন মেধাবী, তেমনি তার স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। একবার মাত্র শিক্ষক যা বলতেন তাই তিনি শ্রবণ করতেন এবং তা কখনোই ভুলতেন না।শৈশবে লতিফ স্যার ছিলেন দামাল ছেলেদের মধ্যে অন্যতম। তবে তার দুরন্তপনা মিটিয়ে দেন তার মেধা । শিক্ষকরা তাকে খুবই আদর করতেন। পড়াশুনার পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণী থেকেই প্রাইভেট পড়াতেন ২-৫ টাকার বিনিময়ে এবং গরিব অসহায়দের বিনা বেতনে পড়াতেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে স্পোর্টসম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।সেখানে স্থায়িত্ব লাভ করেননি। তারপর চাকরিতে যোগ দেন গ্রামীণ ব্যাংকের সহকারী হিসেবে। সেখান থেকে চলে যান বি, এ, ডিসি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে। শিক্ষকতার টানে সেখানে থেকে চলে আসেন। আব্দুল লতিফ স্যার ১৯৮৬ সালে মধুপুর উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহ. শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা পেশায় কর্ম জীবন শুরু করেন। তারপর ভাইঘাট উচ্চ বিদ্যালয়,পরে হাতেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়, সেখান থেকে মধুপুর উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
পরে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে রানী ভবানী উচ্চ বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তারপর তিনি ২০০৫ সালে গোপালপুর সুতি ভি এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে ২৪ অক্টোবর অবসর গ্রহণ করেন। অবসরে গিয়েও তিনি বার্ধক্য কে জীবনে ফিরতে দেননি । বর্তমানে মধুপুর কাকরাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ২০২২ সালে গোপালপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইংলিশ ভার্সন স্কুলে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পান ।
যাতায়াতের দূরত্বের কারণে মধুপুর উপজেলা প্রশাসনের অনুরোধে ইংলিশ ভার্সন স্কুল তারার মেলা প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তার শিক্ষকতা জীবনে নিজের প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্য প্রতিষ্ঠানেরও ছাত্রছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষার আলো দান করেছন। অভিভাবকদের আকুতি ভরা অনুরোধে আজও তাকে প্রাইভেট পড়াতে হচ্ছে। লতিফ স্যার তার জীবনে আটটি প্রতিষ্ঠানে কৃতিত্বের সাথে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাইতো তিনি অর্জন করেছেন, লক্ষাধিক স্টুডেন্টদের জনক উপাধি।
আব্দুল লতিফ স্যার ছিলেন শিক্ষকতা জীবনের বিরল মনের অধিকারী। শিক্ষক কিংবা শিক্ষকতা শব্দটির সাথে বিদ্যাজীবী কিংবা বুদ্ধিজীবীর আত্মিক সম্পর্ক আছে যদিও সকল শিক্ষক বিদ্যাজীবী হলেও বুদ্ধিজীবী নন।কিন্তু আব্দুল লতিফ স্যার সুদীর্ঘ শিক্ষকতায় তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা এবং কৌশলী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি স্টুডেন্টদের মনের খোরাক মেটাতে শরীরচর্চা, সাংকৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বিশেষ অবদান রেখেছেন। মানুষ গড়ার এই কারিগর দীর্ঘতম ৩৮বছর সকল শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতই মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন। তার অনুপ্রেরণায় লাক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা অনুরাগী হয়ে উঠেছে। সূতি ভিএম পাইলট সরকারি স্কুল, ২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং লতিফ স্যার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের উপাধি। বিদ্যালয়টি মেয়ে এবং ছেলে ফুটবলার জাতীয় পর্যায়ে কয়েকবার বিজয়ী হয়। স্যারের বড় অর্জন আজকের জাতীয় দলের — কৃষ্ণা ।
আব্দুল লতিফ স্যার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে কাজ করে থাকেন। উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ২০০৬ -১৯ সাল পর্যন্ত সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংবাদিকতা করেন নিউ টাইম পত্রিকার মধুপুর প্রতিনিধি।
এছাড়া স্যার ব্যাক্তিজীবনে, সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করেন। থাকার ঘরটিও তার টিনশেড বিল্ডিং। সৎ এবং আদর্শ ভাবে চাকরি জীবনকে সমাপ্তি করেছেন। বাল্যকাল থেকেই ভালো ফুটবল খেলতেন। স্যার একজন শিক্ষক, গায়ক, সাংবাদিক এবং একজন সমাজ সেবক। তার জীবনে স্বনামধন্য শিক্ষকের সম্মাননা পেয়েছেন একাধিক বার।০৫-১০-২৪ শিক্ষক দিবসে পেয়েছেন গুণী শিক্ষকের সম্মাননা। স্যারের জীবনের সফলতা হলো বাংলাদেশের সকল সেক্টরে কর্মরত থেকে সেবা দিচ্ছেন লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী। শুধু দেশে নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও বড় বড় পদে থেকে তারা নানাভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছেন।
অমায়িক সদালাপি কর্তব্যপরায়ণ, সুজন আব্দুল লতিফ স্যার ঢাকা প্রতিদিন কে বলেন চাওয়া পাওয়া কিছু নেই আমার শেষ আশা ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে থেকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা। সকলের নিকট দোয়া কামনা করছি যেন পরলৌকিক জীবন সুন্দর ও সুখময় হয়।
মহান আল্লাহর দরবারে এমন হিতৈষী স্যারের জন্য দীর্ঘ হায়াত ও সুস্থ জীবন কামনা করি আমরা সবাই।লতিফ স্যারের মতো শিক্ষক গুরুরা বেঁচে থাকুন শত শত বছর ।