জুয়েল চৌধুরী, হবিগঞ্জ থেকে : কবুতরকে শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না যে তারা কবুতরকে ভালবাসেন না। হবিগঞ্জে শখের বসে অনেকেই কবুতর লালন পালন শুরু করলেও বর্তমান সময়ে এটি একটি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে এটি। কেউ বাড়ির আঙ্গিনায় আবার কেউ কেউ বাড়ির ছাদের মধ্যেই কবুতর পালন করছেন। কবুতরের মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। এছাড়া অন্যান্য পশু পালনের মত কবুতর পালনে এতটা কষ্ট করতে হয় না খামারিদের। জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রায় অর্ধশতাধিক স্থানে বড়-ছোট কবুতরের খামার রয়েছে। আর এসব খামারে সৌখিন খামারিরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর এনে লালন পালন করছেন। অনেকেই আবার কবুতর নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক খেলায় অংশগ্রহণ করে জিতেছেন পুরস্কারও। তবে এর মধ্যে গিরিবাজ, ফ্লাই, রেইসিং, প্যান্সি, ফিজিউনসহ বিভিন্ন জাতের কবুতরই বেশি পালন করছেন এখানকার খামারিরা। খামারিরা বলছেন, উল্লেখিত জাতের কবুতরগুলো ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা জোড়ায় বিক্রি হয়ে থাকে। যে কারণে এ জাতগুলোর কবুতর বেশি পালন করা হচ্ছে।
শহরতলীর ছোট বহুলা গ্রামের কবুতর খামারী গোলাম রব্বানি জানান, ছোট বেলা থেকেই সে কবুতরকে খুব ভালবাসতো। তাই সে কলেজ জীবন থেকেই কবুতর পালন শুরু করে। এক পর্যায়ে কবুতর পালন করা এখন তার পেশায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া মাংসের চেয়ে কবুতরের বিভিন্ন অংশগ্রহণমূলক খেলার কারণে এর প্রতি মানুষ ঝুঁকছে বলেও জানান তিনি। তাছাড়া তার খামার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৌখিন মানুষ এসে কবুতর কিনে নিয়ে যায়।
তারেক মিয়া নামে এক সফল খামারি জানান, তিনি প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে মালিকের কবুতর দেখাশোনা করতেন। এরই সুবাধে কবুতর পালনে আগ্রহী হয়ে পড়েন তিনি। পরে তিনি দেশে এসে শখের বসে ২০১৪ সাল থেকে শুরু করেন কবুতর পালন। ধীরে ধীরে তিনি আয়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন এই পেশা। প্রতি বছর এই থেকে অন্তত ২ লাখ টাকা আয় করেন। তিনি আরও জানান, এখন আমার খামারে প্রায় দুইশ কবুতর রয়েছে। প্রতি মাসে সেখান থেকে আমি প্রায় ৫০/৬০ জোড়া কবুতরের বাচ্চা পাই। একেক জোড়া কবুতর ২ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়া তারেক মিয়ার মত আরও শতাধিক যুবক তাদের এ সফলতা দেখে এগিয়ে এসেছেন কবুতর পালনে। শুধু বেকার যুবকরাই নয়, কবুতর পালনে এগিয়ে এসেছেন জেলার অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরাও। নিজেদের বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছাদে খাঁচা তৈরি করে পালন করছেন দেশি-বিদেশি নানা জাতের কবুতর।
ব্যবসায়ী খায়রুল হাসান বলেন, বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু এরপর আমি বাসার ছাদে অন্তত ২শ কবুতর পালন করি। আমি মূলত শখের বসে শুরু করেছিলাম, এখনও সেই শখেই পালন করি। আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে বলতে পারি এটি একটি ভালো খাত। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, এখন অনেকে যুবকই নিজ উদ্যোগে কবুতর পালনে এগিয়ে আসছেন। বেকার যুব সমাজকে কবুতর পালনে এগিয়ে আসতে জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদফতর থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। নারী কবুতর মাস-দেড় মাস পরপর বাচ্চা দেয়। যে কারণে এটি একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া কবুতর পালনে শ্রম ও খরচ অত্যন্ত কম। তাই এ পেশায় যুবকরা বেশি ঝুঁকছে।