কুমিল্লার মুরাদনগর হাসপাতালে রোগী বাড়লেও বাড়েনি শয্যা। রোগীর চাপ বেশি থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। মেঝেতে মাদুর কিংবা চাদর বিছিয়ে রোগী ভর্তি নিচ্ছে । ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিনই গড়ে ষাটঊর্ধ্ব রোগী ভর্তি থাকে। প্রয়োজনের তুলনায় নেই চিকিৎসক। সংকটের কথা স্বীকার করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলছে সীমিত সামর্থের মধ্যে যথাসম্ভব সেবা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত। প্রায় ৭ লাখ জনপদের ৫০ শয্যার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হওয়ায় রোগীর চাপ থাকে বেশী। প্রতিদিন বর্হিবিভাগে গড়ে রোগী হয় ৬’শ থেকে ৭’শ এবং আন্তঃবিভাগে রোগী ভর্তি থাকে ৬০-৭০ জন। এছাড়া জরুরি বিভাগে দৈনিক গড়ে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। বেড সংকটের কারণে হসপাতালের বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। একসময় প্রসুতি মায়েদের সিজার হতোনা। এখন প্রতিমাসে স্বাভাবিক ডেলিভারির পাশা-পাশি গড়ে ১০/১২ টি সিজার করানো হয়। আন্তঃবিভাগ ও বর্হিবিভাগে রোগীর চাপ বাড়ছে, কিন্তু হাসপাতালের শয্যা বাড়েনি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মিলে মোট ৩৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। এদের মধ্যে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ২৭ জন মেডিক্যাল অফিসার । সব মিলিয়ে আছে মাত্র ১৫ জন। ১৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল ও ৭ টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, গতকাল (বৃহষ্পতিবার) সকাল থেকে টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। পাঁচজন চিকিৎসক বহিঃর্বিভাগে রোগী দেখছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে রোগীদের। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে অনেকেই মেঝেতে বসে পড়ছে এমন দৃশ্য দেখা গেল। আব্দুল হক নামে এক রোগী বলেন, জ্বর, মাথা ব্যথা ও কাশির সমস্যা নিয়ে এসেছি প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বসে আছি এখনও সিরিয়াল পাইনি। আরও ঘণ্টাখানেক লাগবে। নারী ও শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সকল বেডেই রোগী পরিপূর্ণ। বেড না পেয়ে চাটাইয়ে শুয়ে আছেন এক নারী পাশেই তার সন্তান। পৈয়াপাথর থেকে এসেছেন। ঠান্ডা থেকে বাচ্চার নিউমিনিয়া চলে আসছে।
নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের গুঞ্জর গ্রামের আব্দুল আলীম (৫৫) ও ছাত্র সজিব (২১) ওনারা নাক-কানের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় মন খারাপ করে ফিরে যাচ্ছেন। তাঁরা বলেন, ‘ নাকের মাংশ বেড়ে গেছে । কানের ব্যাথা নিয়ে আসছি। এসে শুনি ডাক্তার নেই। রোগ নিয়ে বসে থাকা যায়না। তাই এখন আবার দেবিদ্বার অথবা কুমিল্লা যেতে হবে।
মুরাদনগর উপজেলা ২২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ৫০ শয্যার একটি মাত্র সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স! বিষয়টি মানতে নারাজ সাধারণ সুবিধা বঞ্চিত জনগণ। কম জনবল ও শয্যা নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সাধারণ জনগণের দাবি চিকিৎসক ও হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো হউক।
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. এনামূল হক জানান, হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই রোগীর চাপ থাকে। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে চিকিৎসা সেবা দিতে শয্যা সংখ্যা উন্নতি করা যেতে পারে। চিকিৎসক সংকট আছে। ১৪ টি চিকিৎসক পদ শূণ্য। ৪ জন প্রেশণে আবার ৪ জন বিনাঅনুমতিতে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত। চারজনের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতণ কতৃপক্ষকে লিখিত চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে। সীমিত সামর্থের মধ্যে যথাসম্ভব রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।