‘বিহুরে লগন মধুরে লগন, আকাশে বাতাসে লাগিলরে। চম্পা ফুটিছে চামেলী ফুটিছে, তার সুবাসে ময়না আমার ভাসিল রে।’ কোকিলের ডাক আর চারপাশে গাছে গাছে ফুল দেখলে বোঝা যায় আসছে ফাল্গুনের আগমন। মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতাদের পাশ কাটিয়ে জাগছে নতুন প্রাণ। শীতের প্রায় শেষে মাঘের বিদায়ের পর বসন্তের হাওয়ায় ধীরে ধীরে ফাল্গুন যেন হাতছানি দিচ্ছে দরজায়।
মৌসুমের বর্তমান সময়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে। অনেক এলাকায় শীতের কুয়াশা প্রায় কেটে গেছে। দিনমান উজ্জ্বল সূর্য কিরণে রোদের তেজে ঘামানোর অবস্থা। আর এই আবহাওয়াই জানান দিচ্ছে আসছে সামনে বসন্ত। মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধ জানিয়ে দিয়ে যায়, সত্যি সত্যিই বসন্ত ঋতুর রাজা। উদাস আকুল মন নেচে ওঠে দখিনা হাওয়ায়। সৌরভ তার ভরে দেয় মন-প্রাণ। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের বার্তা পেয়েই যেন প্রকৃতিতে লেগেছে তার ছোঁয়া।
ন্যাড়া গাছগুলোতে আসতে শুরু করেছে নতুন পাতা। শিমুল আর পলাশ গাছে ফুটবে রঙিন ফুল; ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে গ্রামের মেঠো পথকে করে দিবে রঙিন।
বসন্তের পাতাবিহীন ন্যাড়া ডালে আগুনের লেলিহান রক্ত আভায় শোভিত হয়ে দাউ দাউ করে জ্বলবে শিমুল ফুলের সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যকে আরো রঙিন করে তুলবে টিয়া, ময়না, হলুদিয়াসহ নানান জাতের পাখির কলতান। আসলেই প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনে প্রাণে জাগে নতুনের ছোঁয়া। চারপাশে পাখির কলকাকলি আর রক্তিম কৃষ্ণচূড়া সবুজের মাঝে সৃষ্টি করে এক অপরূপ সৌন্দর্য। মানুষের জীবনে ঋতুরাজ বসন্ত নিয়ে আসে প্রেম ও বিদ্রোহের যুগল আবাহন। সে আবাহনে খুলে যাবে দখিনা দুয়ার।
মেয়েরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশসহ নানা রকম ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙের শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পায়জামা ও ফতুয়ায় শাশ্বত বাঙালির সাজে উৎসবের হাওয়ায় ভেসে বেড়াবে পহেলা ফাল্গুনের দিনে।
বাংলাদেশ বা বাঙালি সমাজে ঋতুরাজ বসন্ত আসে নানা রঙ ছড়িয়ে। প্রকৃতিতে তাই লেগেছে রংয়ের ছোঁয়া। আর কয়েকদিন গেলেই দক্ষিণা দুয়ারে বইবে ফাগুনের হাওয়া। তাই বসন্তের আগমনে সুরে সুরে ভেসে আসে ‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা। কারা যে ডাকিল পিছে! আসিতেছে বসন্ত।