সোহেল রানা, শ্রীপুর থেকে :
আসন্ন গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গত পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। তাই নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের দলের মধ্যে লড়াই করে জয়ী হতে হবে। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এম শামসুজ্জামান জানান, শ্রীপুর পৌরসভায় মোট ভোটার ৭১ হাজার ৪১৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৫ হাজার ৯৫৭ জন এবং নারী ভোটার ৩৫ হাজার ৪২৬ জন। আগামী বছরের ২১ জানুয়ারী এ পৌরসভার বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে। পৌরসভা আইন ২০০৯ অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এরই মধ্যে কোনো এক মাসে তফসিল ঘোষণাসহ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখ ও তফসিল কোনোটাই এখনও ঘোষণা না হলেও এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে তাদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড টাঙিয়ে ভোটারদের নজর কাড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে ভোটারদের কাছে দোয়া ও সমর্থন প্রার্থনা করছেন। অপরদিকে, দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পাওয়াকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।
তবে বিএনপির প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ অনেক কম দেখা যাচ্ছে। আবার কেউবা বলছেন হয়রানি এড়াতে কৌশলগত কারণে এতো আগে তারা প্রচারণায় নামছে না। শোনা যাচ্ছে সীমানা জটিলতার কারণে নির্বাচন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপি রাজনৈতিকভাবে সরকারের রোষানলে থাকার কারণে দলবদ্ধভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় না গেলেও সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের কাছে তাদের নির্বাচনী ম্যাসেজ ইতোমধ্যে কৌশলে এবং গড়োয়াভাবে নির্বাচনী চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কারণে সাধারণ ভোটার এবং যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচনে আগ্রহ হারাচ্ছে। শ্রীপুরে বিএনপিতে কোন্দল নেই। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতেই বিএনপি দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করবে। বিএনপি বিশ্বাস করে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।
পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ৬ জন এবং বিএনপি থেকে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন বলে ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রার্থিতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় মাঠে কাজ করছেন বর্তমান পৌর মেয়র ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান, আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট হারুন-অর রশীদ ফরিদ, শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি আহসান উল্লাহ, শ্রীপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম মন্ডল বুলবুল, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ন সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের বিএসসি এবং গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন।
অপরদিকে, বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন শ্রীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী খান, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ শহীদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আবুল কালাম আজাদ। সম্ভাব্য সব প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নিজ নিজ কৌশলে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। পৌর মেয়র আনিছুর রহমান বলেন, বিগত নির্বাচনের সময় আমি ভোটারদের কাছে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার সিংহভাগই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। আবারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। আশা করি ভোটাররা পুনরায় আমাকে নির্বাচিত করে পুনরায় তাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন। আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট হারুন-অর রশীদ ফরিদ বলেন, দলীয় মনোনয় লাভ করতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিবো। বাসাবাড়ির ময়লা যত্রতত্র ফেলা বন্ধ করবো এবং নির্দিষ্ট স্থানে ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করে জৈব সার ও গ্যাস উৎপাদনে সহায়ক করে তুলবো। সুয়ারেজ লাইন স্থাপন করে বৃষ্টির পানি ও পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা সহজ করবো। শিক্ষার গুণগত মান সঠিক রাখতে চেষ্টা করবো এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বাত্নক সহযোগীতার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়িয়ে তুলবো। রাজস্ব তহবিলের যথাযথ তদারকির মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবো এবং ডিজিটাল সেবা পূর্ণাঙ্গভাবে উম্মুক্ত করবো। সর্বোপরি নাগরিক সুবিধা বাড়ানো হবে যাতে কোনো নাগরিক পৌরসভা থেকে সুবিধা বঞ্চিত না হয় সেসব কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করবো।
শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি আহসান উল্লাহ বলেন, গত বছর পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছি এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। আমি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানুষের সেবায় নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রেখেছিলাম। তাই নিজেকে আরও নিবিড়ভাবে জড়ানোর ইচ্ছায় এবং পৌরবাসীর সেবায় দুর্নীতিমুক্ত পৌরসভা গড়তে প্রার্থী হচ্ছি।
শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম মন্ডল বুলবুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে মানুষের কাছে আছি। আমি অনেক দিন ধরেই মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। তাই আরও বেশি সেবায় নিয়োজিত থাকতে প্রার্থী হচ্ছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে আশা করি ভোটাররা অমাকে বিজয়ী করবেন।
গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকেই জনসেবায় নিয়োজিত আছি। আরও ব্যাপকভাবে মানুষের সেবা করার জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছি। তাছাড়া জন্মলগ্ন থেকেই শ্রীপুর পৌরসভায় পরিকল্পিত উন্নয়নের খুব অভাব। আমি দলীয় মনোনয়ন লাভ করতে পারলে পরিকল্পিত ও সুষ্ঠুভাবে পৌরবাসীর দাবীগুলো বাস্তবায়ন করবো।
শ্রীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী খান বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে দুর্নীতিমুক্ত পৌরসভা গঠন করবো। পৌর এলাকায় গ্যাস এবং শতভাগ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং পৌরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সু-শাসন প্রতিষ্ঠা করবো। তিনি আরও বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলে সব প্রার্থী নির্বাচনে আসার সুযোগ পেতো এবং ভোটরারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার সুযোগ পেতো। শ্রীপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ শহীদ বলেন, আমার পরিবার সবসময়ই জনগণের সেবায় নিয়োজিত ছিল। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আমি মানুষের সেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চাই। তাছাড়া, পৌরবাসী পরির্বতন চায়। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের হাত থেকে মুক্তি চায়। তাই উন্নত নাগরিক সেবা ও আধুনিক পৌরসভা গঠনে কাজ করার ইচ্ছা থেকে প্রার্থী হচ্ছি।
শ্রীপুর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন দলীয় মনোনয়ন লাভ করতে পারলে শ্রীপুর পৌরসভায় যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে পৌরবাসী সুফল ভোগ করতে পারছে না। আমি নির্বাচিত হলে পৌরসভাকে আধুনিক এবং আদর্শ পৌরসভা হিসেবে নাগরিকদের দৌরগোড়ায় পৌরসেবা পৌঁছে দেবো।