ক্রমেই শক্তি বাড়ছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের। কক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের প্রভাবে প্রবল বেগে বইছে দমকা হাওয়া। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের হ্নীলা নাটমুড়া নামক স্থানে গাছ ভেঙে পড়ায় সড়কপ যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/৫ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে সেন্টমার্টিন রুটের যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্ধ রয়েছে বিমান চলাচলও। সিত্রাংয়ের প্রবলতা ও সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার প্রশাসন।
প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র ও রাখা হয়েছে শুকনো খাদ্যের মজুদ। বাতিল করা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটিও।
জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি উপলক্ষে রোববার (২৩ অক্টোবর) রাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কমিটির সভা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে মজুদ রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত খাবারও। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে জেলা প্রশাসনসহ প্রতিটি উপজেলা পরিষদে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও পোকাল পার্সন জাহিদ ইকবাল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানী কমাতে উপকূলে বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে গেল রাত থেকে মাইকিং করা হয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে সব আশ্রয় কেন্দ্র।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় ইতিমধ্যে ১১৯৮ বস্তা শুকনো খাদ্য, ৩২৩ মেঃ টন চাল, নগদ ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ৯৯০ টি তাবু এবং ২০০ বান্ডিল টিন মজুদ রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮৬০০ সিপিপি সদস্য। থাকবে ৮৮ টি মেডিকেল টিম এবং ২২০০ জন রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক।
এদিকে, রোববার দুপুর ২টা থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যায় সেন্টমার্টিন থেকে সাড়ে তিন শতাধিক পর্যটককে নিরাপদ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সেন্টমার্টিনে কোন পড়যটকের অবস্থান নেই বলে জানিয়েছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী।
সোমবার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাটে নোঙর করা ১৩ টি ট্রলার ডুবে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর সতর্ক সংকেত প্রচারের পর সব নৌকা ঘাটে নৌঙ্গর করে। কিন্তু জোয়ারে পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় ৫ ঘাটের ১৩ টি মাছ ধরার নৌকা নোঙর করা অবস্থায় ডুবে যায়। ১১ টি নৌকা উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও ২ টি সাগরে তলিয়ে যায়। তিনি বলেন, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা।
এদিকে সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সড়কের উপর গাছ ভেঙে পড়ায় টেকনাফ কক্সবাজার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গাছ সরানোর চেষ্টা করছে স্থানীয়রা।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মো. গোলাম মোর্তজা হোসেন বলেন, সোমবার বিকাল ৩ টা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আবহাওয়া বিবেচনায় পরবর্তি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজিদ সাইফ আহমেদ বলেন, উপকূলীয় এলাকায় সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ৫-৬ ফুট উচ্চতা বেড়েছে। শহরের সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ভাঙন তীব্র হয়েছে। তবে অন্য কোথাও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সম্ভাব্য দূর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজারের পৌরসভা। এমনটি জানিয়েছেন পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় কক্সবাজার শহরে ১০টি আশ্রয়কেন্দ্র, কন্ট্রোল রুম ও মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া খাদ্য, পানি ও জরুরি সেবায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চলছে মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করার কাজও।