সালাহ্উদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ থেকে : খড়ের আগুনে বাঁশের ভেতর আতপ চালের গুড়ি সেদ্ধ হয়ে তৈরি হয় লম্বাটে সাদা পিঠা। চুঙ্গার ভেতরে তৈরি বলে এর নাম চুঙ্গাপিঠা। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে শীত মৌসুমে ভাপা, পুলি আর মালপো পিঠার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পিঠা উৎসব মাতালেও এই পিঠার এখন দেখা পাওয়াই দুষ্কর। এক সময় বাড়িতে জামাই এলে এই চুঙ্গা পিঠার সঙ্গে হালকা মসলায় ভাজা মাছ বিরাণ (ভাজি) ও নারিকেল ও কুমড়ার মিঠা বা রিসা পরিবেশন না করতে পারলে যেনো লজ্জায় মাথা কাটা যেতো গৃহকর্তার। কুয়াশা মোড়া রাতে রাতভর চলতো চুঙ্গাপুড়ার কাজ। গিট্টু (ভাজ) মেপে ছোট ছোট করে কাটা বাঁশের ওপর জ্বলতো খড়ের আগুন। চুঙ্গা পিঠা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। পিঠা বাঙালীর খাদ্যসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য। বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে কোন না কোন পিঠা তৈরী করে খাওয়া হয়। স্বাদ ও গুণে প্রত্যেক অঞ্চলের পিঠা অন্যান্য। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো সিলেট অঞ্চলেও পিঠার নিজস্ব ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে ঢলু বাঁশের লম্বা সরু চুঙ্গায় বিভিন্ন চালের গুঁড়া ভরে তৈরী করা চুঙ্গা পিঠা। আর পৌষ ও মাঘের শীতের রাতে বৃহত্তর সিলেটের গ্রামে গ্রামে এ চুঙ্গা পিঠা তৈরীর ধুম পড়ে।তবে ঐতিহ্যবাহী এই পিঠা বানাতে ঢলু নামে যে বিশেষ প্রজাতির বাঁশ দরকার হয় তা বিলুপ্ত হতে বসায় চুঙ্গাপুড়ারও আকাল চলছে এখন। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন আর পাহাড় উজাড়ের কারণে ঢলু বাঁশ এখন সহজে পাওয়াই মুশকিল। শীতকালে তবু কালেভদ্রে দেখা মেলে ঢলু বাঁশের। এ বাঁশে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে বলে এই বাঁশ সহজে আগুনে পোড়ে না। ক্রমাগত তৈলাক্ত তরল নি:সরণ করে টিকে ঢাকে সরু বাঁশের সবুজ শরীর। এমনকি কয়েক ঘণ্টা আগুনে পোড়ার পরও সবুজই থাকে ঢলু বাঁশ। কিন্তু আগুনের ভাপে চুঙ্গার ভেতরে ঠিকই তৈরি হয়ে যায় চুঙ্গাপুড়া।তাই শীতের কনকনে রাতে ঘটা করে এরকম একটি বিলুপ্ত প্রায় পিঠা চুঙ্গাপিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। আগে চুঙ্গা পিঠা তৈরীকালে সঙ্গে থাকতো গান, পুথি পাঠ, কবিতা আবৃত্তি, কৌতুকসহ বিভিন্ন পরিবেশনা। এখন এসব পরিবেশনা না থাকলেও রয়েছে শীতের রাতে খড়ের আগুনে চুঙ্গা পিঠা তৈরীর প্রচলন।