গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন , ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন মরা লাশ। এই মরা লাশ নিয়ে টানাটানি করে কোনো লাভ নাই।
আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে নেত্রকোণার ঐতিহাসিক মোক্তারপাড়া মাঠে তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের সভাপতিত্বে তারুণ্যের সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
নুরুল হক নুর বলেন, আপনারা জানেন, গণধিকার পরিষদ বাংলাদেশে গত সরকারের আমলে ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজকের এ জায়গায় এসেছে। ২০১৮ সালে আপনাদের নেত্রকোণার কৃতি সন্তান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র হাসান আল মামুনের নেতৃত্বে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করি। যে আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে আজকের এই ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। এখন আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। গণধিকার পরিষদ সেই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এদেশের আপামর জনসাধারণকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। জনগণের ক্ষমতায়ন করতে চায়। নেত্রকোণার সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষার্থীদের বৈষম্য দূরীকরণে নেতৃত্ব দিয়েছে আন্দোলন করে। আন্দোলন করে সফল হয়েছে। আগামীতে জাতির বৈষম্য দূরীকরণে নেত্রকোণা-২ আসন থেকে হাসান আল মামুনকে নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটে জয়লাভ করিয়ে সংসদে নিয়ে অবহেলিত এই অঞ্চল তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেবেন।
তিনি বলেন, এই গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রামে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের রক্ত দিতে হয়েছে। সংগ্রাম করতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে। শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা কেউ করবেন না। যারা এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এবং তার দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
নুরুল হক নুর বলেন, আমাদের রাজনৈতিক মতের ভিন্নতা আছে, পার্থক্য আছে। দেশ এবং জাতির প্রশ্নে আমাদের এক ও অভিন্ন অবস্থান নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যেতে হবে। বিএনপি, জামায়াত, গণধিকার পরিষদসহ ৪২টি দল আমরা আন্দোলন করেছিলাম। আমি মনে করি এই ৪২টি দল ছাড়াও এ আন্দোলনে আমাদের তরুণরা নেতৃত্ব দিয়েছে। সেই তরুণদের যে অবদান, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যে অবদান দেশের প্রশ্নে সকলকে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নাজেহাল করার জন্য, অস্থিতিশীল করার জন্য স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি বসে প্রায় প্রায় ফোন আলাপ ফাঁসের নাটক করেন। কিন্তু পরিষ্কারভাবে আমি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদেরকে বলে দিতে চাই। আপনাদের গত পাঁচ বছর বলছিলাম, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, জুলুম, অত্যাচার করবেন না। এমন দিন আসবে আফগানিস্তানের মত আপনাদের নেতা-নেত্রীরা প্লেনের চাকা ধরে পালাবেন, আপনাদেরকে কিন্তু দেশে থাকতে হবে। ঠিকই আপনাদের নেত্রী জুতা পড়ার টাইম পায় নাই। প্লেনে করে পালাইছে আপনাদেরকে এতিম করে দিয়ে। আপনারা জনগণের কাছে ক্ষমা চান অনুশোচনা থেকে। জনগণের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করেন। আওয়ামী লীগ ছেড়ে দুধ দিয়ে গোসল করে পবিত্র হন। আওয়ামী লীগের নাম যদি মুখে আনেন বাংলার মানুষ কিন্তু আস্ত রাখবে না। রাজপথে শহীদের রক্ত এখনো শুকায় নাই। আহত ও নিহত পরিবারের আহাজারি এখনো থামে নাই। কাজেই যদি আস্ফালন দেখাতে চান তার পরিণতি ভালো হবে না।
নুরুল হক নুর, আমরা গ্রাম কিংবা শহর কোথাও হানাহানি-মারামারি চাই না। শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, সবাইকে নিয়ে আমরা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। যেখানে মারামারি হানাহানি থাকবে না। আমাদেরকে সহনশীল হতে হবে, সম্প্রীতি এবং শান্তির রাজনীতি করতে হবে। তাই ঢালাওভাবে কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা, কিংবা কারো ওপর জুলুম করা যেটা আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর ধরে করেছে, আমরা যেন সে পথে না যাই।