এমএ রাজ্জাক, দৌলতপুর থেকে : দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো অবশেষে। আলো জ্বললো চরাঞ্চলে। স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ এগোলো পৌঁছে গেছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার বিদ্যুৎ। চলমান মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই কার্যক্রম চলছে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায় দুটি ইউনিয়নের (চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর) একটিতে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে দুই ইউনিয়নের এই প্রকল্পভুক্ত সবকটি গ্রাম শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় চলে আসবে।
চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার (৪৯৫০৩) জনসংখ্যার প্রকল্পভুক্ত ৩৮টি গ্রামের মধ্যে গতকাল রোববার দুপুরে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৭টি গ্রামে নতুন এই বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করা হয়। বিদ্যুৎ পেয়ে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে গ্রামগুলোয় বসবাসকারীদের মধ্যে। এই প্রকল্পটির মধ্য দিয়ে নির্বাচনী এলাকায় দেওয়া সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহর আরও একটি অঙ্গীকার পূরণ হচ্ছে। চরাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের বিদ্যুৎ সংযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডলের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন, কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার সোহরাব উদ্দিন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মহিউদ্দিন, কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি রেজওয়ান আলী খান।
আরও বক্তব্য দেন- কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সদস্য নাসির উদ্দিন মাস্টার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরদার তৌহিদুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম শেলী দেওয়ান, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক টিপু নেওয়াজ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সাদিকুজ্জামান খান সুমন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সরওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মাত্র দুই বছরের মাথায় আমরা চরে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দিতে পেরেছি। চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্মাণ ও পদ্মা নদীর ভাগজোত পয়েন্টে একটি সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, চর এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিল। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় এখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আসবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশা তার প্রতিশ্রুতি পূরণে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন।
পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের (দৌলতপুর) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) কে এম তুহিন মির্জা বলেন, দুর্গম চর হওয়ায় এখানে বিদ্যুতের লাইন স্থাপন ও মালামাল পরিবহন খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। পদ্মা নদীর মধ্যে দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে লাইন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর দুই ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার পরিবার বিদ্যুতের আওতায় আসবে। এর অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম বিদ্যুতায়ন করা হল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দুর্গম চরে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে আগামী ২১ মার্চের মধ্যে ২৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এই শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৪২ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ২২১টি পরিবারে সংযোগের মধ্য দিয়ে চরাঞ্চলে বিদ্যুতের যাত্রা শুরু হয়। সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সরওয়ার জাহান বাদশাহ সুইস টিপে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের সাত গ্রামের মানুষের মধ্যে তাদের স্বপ্নের বিদ্যুতের আলো জ্বালিয়ে দিলেন।
অন্যদিকে এই বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে গড়ে ওঠা দালাল চক্রের তৎপরতা নিয়ে ইতোপূর্বে ভোরের কাগজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হলেও এখনো তাদের রোধ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রকল্পভুক্ত এলাকাবাসী। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে সব মিলিয়ে একেকজন গ্রাহকের আড়াই হাজার টাকা খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে একেকজন গ্রাহককে গুণতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ পেতে যাচ্ছে জেনে চরের মানুষরা বেজায় খুশি হলেও মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্র তাদের সেই খুশিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টিও এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একজন বক্তা উল্লেখ করেন। পরে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ দালালদের চিহ্নিত করে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেশ দেন।