সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ থেকে:
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের খলিশাডোহরা এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে উপকারভোগীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা যায়, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অংশ হিসেবে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীন-গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর দিয়ে মানবিক নজিরবিহীন উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নে ১৭ উপকারভোগীর জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়। সারাদেশে একযোগে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনের মাধ্যমে উপকারভোগীদের মধ্যে ঘরগুলোর চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এর কয়েক মাসের মধ্যেই একাধিক ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সার্বিক তদারকিতে ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম। ঘরগুলোর নির্মাণ কাজের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগে বরাইদ ইউনিয়নের সচেতন মহলের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয় সাইফুল ইসলামের। ঘর নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে একাধিক ঘরে ফাটল দেখা দিলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম তড়িঘড়ি করে ফাটলে প্রলেপ দিয়ে সংস্কার করেন। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ঘরগুলো নির্মাণ করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ঘরের উপকারভোগীরা ঘর বুঝে পাওয়ার পর বসবাসের উপযোগী করতে নিজেদের টাকা খরচ করেছে। এই ঘরগুলো নির্মাণকালে স্থানীয় সরকারের ৪০ দিনের কর্মসূচির লোক দিয়ে কাজ করানো হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পশ্চিম পাশের ঘরগুলোর সামনে বড় ডোবা রয়েছে। পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে নামমাত্র উচ্চতার ভিটি করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকগুলো ঘরের বারান্দা ও মূল ঘরের ছাউনির সংযোগের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে। এ ছাড়া ৮নং ঘরে তিনটি ফাটল, ৫নং ঘরের পিলারের উপরের অংশে ফাটলসহ বেশ কিছু ঘরে ব্যবহৃত কাঠ বাঁকা হয়ে পড়েছে। কিছু ঘরে ফাটল দেখা দেওয়ায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম কোনো রকম প্রলেপ দিয়ে ফাটলগুলো সংস্কার করা হয়েছে। উপজেলার ১৭ উপকারভোগীর মধ্যে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হলেও অল্প কয়েকটি ঘরে লোকজন বসবাস করে।
১নং ঘরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রেখা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে আমরা মহাখুশি। তবে আমার ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার পর থেকেই ঘরের তিনটি জানালাই অকেজো হয়ে পড়েছিল। পরে সাইফুল ইসলাম এসে ঝালাই করে দিয়েছে। বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতরে জল পড়ে। আবার ওয়ালেও ফাটল দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ঘরের অনিয়মের কথা বলায় এসিল্যান্ড পুলিশ নিয়ে এসে আমাকে তার অফিসে নিয়ে গিয়ে শাসিয়েছে।
আন্না রাণী নামের আরেক উপকারভোগী বলেন, বৃষ্টির সময় ঘরের ভেতরে জল পড়ার কারণে ঘুমানোর স্থানে বালতি বসিয়ে রাখতে হয়। ৪নং ঘরের বাসিন্দা আয়নাল আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, বালিয়াটি ইউনিয়ন থেকে আমাদের ১৫ জনকে ঘর দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম বালিয়াটি এলাকায় ঘর দেওয়া হবে। ঘরে উঠার সময় তিন হাজার টাকা খরচ করে মাটি ফেলে উঠানের সামনে ভরাট করেছি। আমার ঘরের বারান্দা এবং চালের ছাউনির সঙ্গে অনেক ফাঁকা রেখেই ঘর বানিয়েছে। অপর ঘরের বাসিন্দা পাপন মিয়াও উঠানের সামনে ৩ হাজার টাকা খরচ করে মাটি ভরাট করেছে। এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, কিউরিং কম হলে ফাটলের মত দেখা যায়। একটি ঘরের কিছু অংশে ফাটল দেখা দিলে গতকাল (শনিবার) লোক পাঠিয়ে সংস্কার করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা ঘরে যে মালামাল দেওয়ার কথা রয়েছে, সেই রেশিও অনুযায়ীই দেওয়া হয়েছে। আর রেখা নামের কাউকে অফিসে ডেকে এনে শাসানো হয়নি। তার স্বামী বালিয়াটিতে মাছের ব্যবসা করে। এ কারণে তার স্বামী যাতে ওই ঘরে থাকতে পারে, এজন্য তাকে সাইকেল কিনে দেওয়ার কথা বলেছি। ঘর নির্মাণে মাটি ভরাটের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। তাই চেয়ারম্যানকে বলে ৪০ দিনের কর্মসূচির লোক দিয়ে মাটি ভরাট করা হয়েছে।