শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
কোরবানির ঈদের জন্য ১২০০ কেজি ওজনের গরু নিয়ে প্রস্তুত বেলকুচির জহুরুল ইসলাম শাহজাদপুরে বৃষ্টির জন্য ইস্তেস্কার নামাজ আদায় তাপদাহে ঝরে যাচ্ছে লিচুর গুটি, দিশেহারা চাষিরা ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় যুবলীগ নেতা নিহত রাণীনগরে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় বিএনপি ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : ওবায়দুল কাদের পাইকগাছায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে আইসক্রিম কারখানার মালিককে জরিমানা বড়াইগ্রামে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ভ্যানচালকের মৃত্যু, আহত ১ নন্দীগ্রামে মাটিখেঁকো ধরতে মাঠে নামলেন ইউএনও, জরিমানা নান্দাইলে পরিকল্পনামন্ত্রীর গনশোনানি চিরিরবন্দরে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি সালথায় প্রচণ্ড খরতাপে পাটের ক্ষতির আশঙ্কা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার অঙ্গীকার প্রতিরক্ষা স্থায়ী কমিটির বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসি কাঁঠাল চাষে লাখপতি সবুজ তীব্র তাপপ্রবাহে বৃষ্টি কামনায় সালথায় মাঠের মধ্যে বিশেষ নামাজ আদায় বে টার্মিনাল পুরোটা বিদেশি বিনিয়োগেই হবে: বন্দর চেয়ারম্যান নান্দাইলে পরিকল্পনামন্ত্রীর উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের সাথে উন্নয়ন ও প্রশাসনিক সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভা বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ তীব্র গরমে হাঁসফাঁস পাইকগাছার জনজীবন দু‌দিনে সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৫২৩৮ টাকা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মরিশাসের প্রতি আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর আগামীতে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট : ধর্মমন্ত্রী কর্মহীন প্রবাসীদের পাশে মানবতার হাত নিয়ে সৌদি আরব প্রবাসী আলী হোসেন থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ঘাটাইলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা,বিয়ের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা নারী বিশ্বকাপের ভেন্যু দেখতে সিলেটে আইসিসির প্রতিনিধি দল এমপি কন্যার জন্মদিন উপলক্ষে পাইকগাছায় তাপদাহে অতিষ্ঠ পথচারীদের মাঝে শরবত ও পানি বিতরণ বড়াইগ্রামে হিট স্ট্রোকে জমিতেই কৃষকের মৃত্যু চিরিরবন্দরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন – সুমন দাস সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ডেমরায় দুই ব্যাক্তি গণধোলাইয়ের শিকার

একুশ আমার মাতৃভাষা

অনলাইন ডেস্ক :
রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ৪:৩০ পূর্বাহ্ন

একুশে জন্ম একুশে আশা
একুশ আমার বাংলা ভাষা।
একুশে খিদে ভাতের থালা
একুশ আমার বর্ণমালা।
একুশে শহীদ একুশে প্রাণ
একুশ আমার বাংলা গান।
একুশে শপথ একুশে বড়াই
একুশ বাংলা ভাষার লড়াই।
একুশে মিছিল একুশে হাঁটা
একুশ মানে না পথের কাঁটা।
একুশে জীবন লক্ষ বার
একুশ আমার অহংকার।

-কবীর সুমন
মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা। আজ মহান একুশে। মহান শহীদ দিবস। সেই সঙ্গে গোটা বিশ্বব্যাপী দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও পালন করা হবে। ১২৫২ সালের এই দিনে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পথ ধরে সালাম বরকত রফিক জব্বার তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার। একারণে বাঙালির এই মহান আত্মত্যাগকে গোটা বিশ্ব স্মরণ করবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে। তারা জানবে আমাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা। তারা জানবে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন জাতিসত্তার কথা।

 শিক্ষার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যে বিষয়টি যুক্ত তা হলো নিজস্ব ভাষা। ভাষা মানুষের আত্মবিকাশের পথকে সম্প্রসারিত করে। এ জন্য একজন মানুষ তার ভাষা প্রয়োগে যতোটা দক্ষতা অর্জন করবেন জীবনের নানা ক্ষেত্রে তিনি একটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন। 

পাকিস্তানের গবর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় সফরে এসে তার বক্তৃতায় ঘোষণা করেনÑ’একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ সেদিন ‘নো নো’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করেছিল এদেশের ছাত্রযুবকেরা। এরপর নানা সংগ্রাম আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়। এর জন্য রক্ত ঝরাতে হলেও বাঙালি এক দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। একুশ তাদের এমনি সাহসী করে তোলে যে, এরপর বলা হতে থাকে ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’। এই উন্নত শির জাতিই পরে স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়। বস্তুত একুশের পথ ধরেই এসেছে আমাদের স্বাধীনতা।

ভাষা আন্দোলনের ৬ দশকেরও বেশি সময় পার হয়েছে। যে চেতনাকে ধারণ করে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল তার কতোটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে এইসময়ে সঙ্গত কারণেই এই প্রশ্ন আজ জাতির সামনে। এছাড়া বাংলাদেশ নামক স্বাধীন দেশটির বয়স এখন ৪৯ বছর। স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমেই প্রকৃত পক্ষে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন পূর্ণতা পায়। এ কারণে আশা করা হয়েছিল রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হবে। দেশের সকল মানুষ তার নিজের ভাষায় লেখতে পড়বে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে কি তাই হয়েছে? এর উত্তর হবে, না হয়নি।

এখনও সর্বস্তরে বাংলা চালু হয়নি। উচ্চ আদালত, প্রশাসনসহ সর্বত্র এখনো ইংরেজির দাপট। এমনকি ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র পর্যন্ত লেখা হয় ইংরেজিতে। সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ফেস্টুন, বিজ্ঞাপনেও ইংরেজির ছড়াছড়ি। যদিও এদেশের সিংহভাগ মানুষ এখনও অক্ষর জ্ঞানহীন। তাই ভাষা আন্দোলন এখনও শেষ হয়ে যায়নি। যতোদিন একজন মানুষও নিরক্ষর থাকবে ততদিন ভাষা আন্দোলন চলবে। এর চেতনাকে ধরে রাখতে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিটি মানুষকে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে তুলতে না পারলে, তাদের শিক্ষিত করে তোলা না গেলে ভাষা শহীদদের আত্মা তৃপ্তি পাবে না। তাদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শনও সম্ভব হবে না।

শিক্ষার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যে বিষয়টি যুক্ত তা হলো নিজস্ব ভাষা। ভাষা মানুষের আত্মবিকাশের পথকে সম্প্রসারিত করে। এ জন্য একজন মানুষ তার ভাষা প্রয়োগে যতোটা দক্ষতা অর্জন করবেন জীবনের নানা ক্ষেত্রে তিনি একটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন। এজন্য বাস্তবিক কারণেই একজন আধুনিক মানুষকে আরও দক্ষ, যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য ভাষার ওপর পূর্ণ দখল থাকা চাই। সেটা অবশ্যই তার মাতৃভাষা। এরসঙ্গে অন্যভাষা যতো শেখা যায় ততই ভাল।

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার বিশেষ করে যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর প্রযোজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু তাই বলে নিজস্ব সত্তা বিসর্জন দিয়ে স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে হবে? এই আত্মবিনাশের পথ থেকে আমাদের ফিরে আসতেই হবে। লেখায়, বলায় পঠনে পাঠনে সর্বত্র বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে মর্যাদার আসনে।

মনে রাখতে হবে একুশে ফেব্রæয়ারি এখন কেবল আমাদের নিজস্ব ব্যাপার নয় এটি এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও। এমনকি জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে দাবি জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের ৬৬তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলাভাষায় দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দাবি জানান। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় তিনশ’ মিলিয়ন মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। আমি বাংলাভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দিতে আমাদের আবেদনের প্রতি সকলের সমর্থন কামনা করছি। আজকে আবারও সেই প্রস্তাবের পক্ষে আপনাদের সমর্থন কামনা করছি। এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে সর্বপ্রথম বাংলায় ভাষণ দেন। ইতিমধ্যে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির ভিত্তিতে ২১ ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এরই আলোকে বাংলাকে জাতি সংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা অত্যন্ত যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি।

সৃজনশীল প্রকাশকরা হাজারো বইয়ের পসরা নিয়ে হাজির হন বইমেলায়। মেলায় আগত দর্শক সমাগম নিশ্চিতভাবেই প্রমাণ করে সারাদেশের অগণিত গ্রন্থ পিপাসুর নতুন বই হাতে পাওয়ার বিপুল আকাঙক্ষাকে। একুশের চেতনাসমৃদ্ধ মেলাকে কীভাবে আরও সম্প্রসারণ করা যায়, এর শ্রী বৃদ্ধি করা যায় এ নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই সময়ের অভিঘাতে সবকিছু পাল্টাচ্ছে। মানুষের রুচি ও মূল্যবোধও পাল্টাচ্ছে। যে কারণে এর সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য বইমেলার চেতনা, উদ্দেশ্য ও কর্মপরিকল্পনায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। বইকেন্দ্রিক একটি সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণে বইমেলা যেন আরও বেশি অবদান রাখতে পারে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। করোনা মহামারির কারণে এবছর ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা হচ্ছে না। মার্চ মাসের ১৮ তারিখ থেকে বইমেলা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সকল সংকট, শঙ্কা উজিয়ে আবারও মিলনমেলা জমে উঠবে এমনটিই প্রত্যাশা।

মনে রাখতে হবে আমাদের দেশে এখনও সিংহভাগ মানুষ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত। কাজেই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের সঙ্গে সকলকে শিক্ষিত করে তোলার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শিক্ষিত জাতি ছাড়া একটি উন্নত সমাজ ব্যবস্থার কথা চিন্তাও করা যায় না। এ জন্যই বলা হয় যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। এ জন্য শিক্ষার হার বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এ যাত্রায় শামিল করতে হবে। আমাদের দেশে অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে। এদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা। শিক্ষার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যে বিষয়টি যুক্ত তা হলো নিজস্ব ভাষা। বিশেষজ্ঞের মতে ‘ভাষার অসামান্য গঠনের কারণে একটি গোষ্ঠী তৈরি হয় সেই সব ব্যক্তিদের দিয়ে যারা এভাবে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম। আদিম অবস্থায় প্রত্যেক গোষ্ঠীরই তা যতই ছোট হোক না কেন, নিজস্ব ভাষা বা উপভাষা আছে।’

বাংলাদেশে বসবাসরত প্রতিটি নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা থাকলেও এদের মধ্যে অধিকাংশের ভাষারই নেই নিজস্ব বর্ণমালা। লিখিত রূপ না থাকায় তাদের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের অবলুপ্তিও যেন ত্বরান্বিত হচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনাই হচ্ছে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোর ভাষা হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। আর এ দায়িত্ব শুধু বাঙালির নয় পৃথিবীর সকল মানুষের। আমরা যেন শুধু আবেগতাড়িত না হয়ে অমর একুশের কথা না বলি। একুশ তখনই সার্থক হবে যখন প্রত্যেক জনগোষ্ঠী তার নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারবে। এই ভাষায় শিক্ষা লাভ করতে পরবে। শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারবে। তবেই সার্থক হবে একুশ। সার্থক হবে বইমেলা। এবারের একুশে এই বোধ জেগে ওঠুক সকলের মধ্যে।

লেখক : ড. হারুন রশীদ , সহকারী সম্পাদক (জাগো নিউজ), সাংবাদিক, কলামিস্ট।


এই বিভাগের আরো খবর