শামীম হোসেন সামন, নবাবগঞ্জ থেকে:
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা ইউনিয়নের হযরতপুর গ্রামে মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে সখের বশে তিন বন্ধু মিলে শুরু করেন ভিনদেশী এই ফলের চাষ। শুরুটা সখের বশে হলেও এখন তারা স্বপ্ন দেখছে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের। এখন বানিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন। অল্প সময়ে বেশি ফলন, স্বল্প মূলধনে অধিক উৎপাদন হওয়ায় অনেকেই ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। গ্রামের শিক্ষিত যুবকরাও ত্বীন ফল চাষের জন্য চারা কিনে বাড়িতে রোপন শুরু করেছে। বাজারে চাহিদা ভালো হওয়ায় দিন দিন ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে এলাকার অনেকেই। ১ কেজি ত্বীন ফল হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একবছর আগে ইউটিউবে ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিন বন্ধু মিলে শুরু করেন ডুমুর বা ত্বীন ফলের চাষ। কোনোরকম প্রশিক্ষণ ছাড়াাই ইউটিউবে ভিডিও দেখে দেখেই যাত্রা শুরু হয় তাদের। গাজীপুর মাওনার একটি নার্সারী থেকে গাছের চারা সংগ্রহ করেন তারা। নিজেরাই সময় ভাগ করে যত্ন নেন গাছের। অল্প দিনে দেখেছেন সফলতার মুখ। পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এই ফল ও গাছের কলম দিতে চারা বিক্রি করে তারা লাভবান হচ্ছেন। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই ফল বাজারজাত করণের উদ্দেশ্যে বাগান বর্ধিত করার কাজ চলছে।
শুরুর গল্প বলতে গিয়ে আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি ছোটবেলা পবিত্র কুরআনে ত্বীন ফলের বিষয়ে জানতে পারি। এর গুনাগুন ও মর্যাদা অনেক বেশি তাই মহান আল্লাহ ত্বীন ফল নিয়ে শপথ করে আয়াত নাযিল করেছেন। সেই থেকে জানা কিন্তু এই ত্বীন ফল যে ডুমুর তা জানতাম না। আমাদের দেশের ডুমুর আর আরবের ডুমুর দেখতে অনেকটা এক হলেও রয়েছে স্বাদ ও মানের তফাৎ। হঠাৎ ইউটিউবে ভিডিও দেখে জানতে পারি বাংলাদেশে আরবের ত্বীন ফল অনেকেই চাষ করছে। তারা বেশ সফলতাও পেয়েছেন। আমরা প্রথমে বাণিজ্যিক চিন্তা না করলেও এখন এটাকে নবাবগঞ্জ সহ সারা দেশে বিক্রির চিন্তাা করছি। এখন অনেকেই শখের বসে বাগান দেখতেও আসেন। অনেকেই জানতে চায় রোপনের নিয়ম। আর নিচ্ছেন পরামর্শও। বর্তমানে আমরা বানিজ্যিকভাবে শুরু করেছি। চারাও বিক্রি করছি প্রতিনিয়ত। এছাড়াও কলম দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। ধীরে ধীরে অনেকেই ত্বীন ফল সম্পর্কে জানতে পারছে।
আরেক ত্বীন চাষী হাসান মৃধা বাপ্পি বলেন, ১৮৬ পিছ চারা নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করি। আমরা চিন্তাও করতে পারি নাই যে আমাদের সখের প্রজেক্ট সফলতার মুখ দেখবে। সত্যি বলতে আমি অনেক খুশি। অনেক দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসে আমাদের বাগান দেখতে। এটা খুব ভালো লাগে আমার। পাশাপাশি লাভবানও হচ্ছি। আমরা প্রতি পিস চারা ৬শ ৫০ টাকা করে কিনে আমি। আর প্রতি কেজি ত্বীন ফল বিক্রি হয় ৮শ থেকে ১ হাজার টাকায়।
প্রখর চন্দ্র বাড়ৈ ও এই স্বপ্নের একজন অংশীদার তিনি বলেন, এই ত্বীন ফলের পুষ্টিগত মান অনেক বেশি। এটা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি সুস্বাদু ফল। নিজ উদ্যোগে আমরা এই ত্বীন ফল চাষ শুরু করেছি। যদি সরকারি ভাবে সহযোগিতা পাই তবে সারা দেশে আমরা এই ফল রপ্তানি করতে পারব।
গাছ রোপণের প্রথম বছরেই গেছে ত্বীন ফল। প্রতিবছর এই ফলন বৃদ্ধি পায়। প্রায় ১২ মাসই এই গাছ থেকে ফল হয়। তাই সারা বছরই বিক্রির সম্ভাবনাময় এই ফল চাষ করে বেকারত্ব দূর করতে পারে যুবসমাজ। সংশ্লিষ্টদের দাবি, এ জন্য প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষন ও সরকারি সহায়তা।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো ঃ নাহিদুজ্জামান বলেন, যেহেতু ত্বীন ফল আমাদের দেশের ফল না। তাই সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ বা সহযোগিতার সুযোগ আসেনি। যেহেতু এই বিষয়টি নতুন আশা করি পরবর্তীতে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ, চারা সংগ্রহ বা বিতরণ করা যাবে। তবে হযরতপুরের ত্বীন চাষি কে প্রাথমিক ভাবে আমি একটি ধারণা দিয়েছি। পরে তারা নিজ উদ্যোগে ত্বীন ফল চাষ শুরু করেছে। আশাকরি তারা এই ফল চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে।