রফিকুজ্জামান, চাটখিল থেকে:
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম মে-২০২১ এ নোয়াখালী জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হন। তিনি শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হওয়ায় নোয়াখালীর পুলিশ সুপার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এর সঙ্গে এসআই কৃষ্ণ কৃমার দাসকে শ্রেষ্ঠ অস্ত্র জব্দ ও এসআই সামছুল আমিন শ্রেষ্ঠ এসআই নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ চাটখিল থানায় যোগদানের পর পাল্টে গেছে চাটখিল থানার আইন-শৃঙ্খলার চিত্র। তিনি চাটখিল থানায় যোগদান করার পর মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। মাদক বিরোধী এই অভিযানে তিনি শুধু ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করেই চুপ থাকেননি। প্রতি শুক্রবার উপজেলার প্রত্যেকটি মসজিদে জুম্মার নামাজের খুৎবার পর সামাজিক সচেতনতা বৃৃদ্ধির লক্ষ্যে মুসল্লিদের মধ্যে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেন এবং মাদক বিরোধী লিফলেট বিতরণ করেন। গত মাসে চাটখিল থানা পুলিশ বিপুল মাদক ও অস্ত্র জব্দ করে। ওসি আনোয়ারুল ইসলাম যোগদানের পর এখন পর্যন্ত চাটখিল থানায় মোট ৪০০টির অধিক মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে চাটখিলের দুই বড় মাদক ব্যবসায়ী পরকোটের মনির ও হাটপুকুরিয়া ইউনিয়নের সায়েম ফিরোজ নিহত হয়। শুধু মাদক বিরোধী অভিযান নয়, গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন সময় নোয়াখালী জেলা পুলিশ কর্তৃক পুরষ্কার প্রাপ্ত হয় চাটখিল থানা। ওসি আনোয়ারুল ইসলামের সফলতার বহরে সবচেয়ে বড় সফলতা, তিনি চাটখিল থানায় যোগদান করার পর কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রথম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়নের পশ্চিম শ্রীপুরে। হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে ওসি আনোয়ারুল ইসলাম নিজেই হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে এবং হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চাটখিল থানার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে। সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ ৩ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে। তৃতীয় ঘটনা ঘটে কিছুদিন আগে থানার রামনারায়নপুর গ্রামে ভাসুর কর্তৃক ছোট ভাইয়ের স্ত্রী খুন। এই হত্যাকাণ্ডটি ওসি আনোয়ারুল ইসলামের সময়ে সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের আসামিকে ওসি নিজেই টানা ৭২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালে দা ঘটনার পাশ্ববর্তী পুকুর থেকে হত্যাকারীকে সঙ্গে নিয়েই জব্দ করে। আরেকটি হল রিকশাওয়ালাকে হত্যা করে মারার পর ওড়নার সূত্র ধরে মোহরকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। হত্যাকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের রুখে দিয়েও তিনি আরও একটি সফলতা স্থাপন করেছেন। চাটখিল থানা এলাকায় মোটর সাইকেল চোরা কারবারীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেন। মাত্র একদিনে বিভিন্ন এলাকায় ওসি নিজেই অভিযান পরিচালনা করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৩ চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করে। এসময় ৩টি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। বর্তমানে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে কঠোর ভূমিকা রেখেছেন তিনি। লকডাউন বাস্তবায়নে ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে যে সব অভিযান ক্রমান্বয়ে করে যাচ্ছেন, তা বর্তমানে অনলাইনে ভাইরাল হয়ে গেছে। জনমনে প্রশংসা কুড়িয়েছে। চাটখিল পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কথা শুনতে চাইলে সাধারণ নাগরিকরা বলেন, চাটখিল থানার ওসিকে যে কোন প্রয়োজনে ফোন করলে তিনি সুন্দরভাবে সম্ভোধন করে কথা বলেন এবং যে কোন বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান বর্তমান চাটখিল পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে। চাটখিল পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমার প্রথম কাজ হলো পুলিশ সাধারণ মানুষের বন্ধু, তা প্রমাণ করা। এ কাজটি আমি করি শিষ্টের লালন, দুষ্টের দমন এই নীতিতে। আমি বিশ্বাস করি অপরাধী কোনো দলের নয়। একজন ওসি হিসেবে জনগনকে যে সেবা দেওয়ার কথা আমি শুধু আমার পেশাদারিত্ব থেকে সেটাই করছি। তবে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ সহ যে কোন অপকর্মের বিরুদ্ধে চাটখিল পুলিশ স্টেশন এই কর্মকাণ্ড চলবে। চাটখিল থানা এলাকায় কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর স্থান হবে না। আমার অনুপ্রেরণার জায়গা হলো আমাদের পুলিশ সুপার মহোদয়।