রাজিবুল হক সিদ্দিকী, কিশোরগঞ্জ থেকে :
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকেই শীতের হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। শীতের আগমনীর ঊষালগ্নে কিশোরগঞ্জে হাওর জনপদে অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠছে। প্রতি বছর হেমন্তের মাঝামাঝি সময় থেকেই হাওর জুড়ে হালকা শৈত্য প্রবাহ বইতে শুরু করে। আর ঠিক এ সময়টাতেই হাওরের বিশাল এলাকায় ছুটে আসে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। সুদূর সাইবেরিয়ার জলবায়ু এই সময়ে পাখিদের অনুকূলে না থাকায় সাইবেরিয়ান বিচিত্র পাখিকূল ছুটে আসে বাংলাদেশে। এ দেশের যেখানেই জলাভূমি সেখানেই গড়ে ওঠে পরিযায়ী পাখিদের আবাস। বিশেষ করে হাওরের জনপদ এই সময়টাতে এ সকল বিদেশী পাখির কল-কাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে।
গত কয়েকদিন ধরে অতীতের ন্যায় এবারে নানান পরিযায়ী পাখির উপস্থিতিতে হাওর এলাকায় নান্দনিক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই হাওরের স্বচ্ছ জলের সঙ্গে এ সকল পাখির অদ্ভুত জলকেলিতে নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রতিদিন হাজারো পাখি ও প্রকৃতিপ্রেমি মানুষ হাওরের বুকে পাখিদের নান্দনিক উড়ন্ত পাখির ডানা অবলোকনের জন্য দলে দলে ছুটে আসছেন হাওর ভ্রমণে।
সরেজমিনে মিঠামইনের কেওয়ারজোর হাওর, ইটনার থানেশ্বর হাওর বড় হাওর, অষ্টগ্রামের বাঙ্গালপাড়া হাওর, নিকলীর ছাতিরচর হাওর, ইটনার মাগুরা খাল ও বাদলা হাওরসহ বিভিন্ন হাওর ঘুরে লাখো পরিযায়ী পাখির দৃষ্টিনন্দন উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সন্ধ্যার ঠিক আগে পাখিদের দল বাঁধা উড়াউড়ির দৃশ্য দেখে যে কারো নয়ন জুড়িয়ে যাবে। বিদেশী পাখির পাশাপাশি হাওরের জলাভূমিতে দেশীয় পাখির উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে পানকৌড়ি পাখির দলবদ্ধ বিচরণ দর্শণার্থীদের চোখে অপার সৌন্দর্যের আনন্দ ছড়িয়ে দেয়।
দিনের আলোতে এসব পরিযায়ী পাখি হাওরের জলে ভেসে বেড়ালেও রাতে এদের আশ্রয় হয় হাওরের হিজল গাছসহ বিভিন্ন বাড়ির গাছপালায়। তবে, সব বাড়ির গাছে এরা আশ্রয় নেয় না। যেখানে নিজেদেরকে অধিকতর নিরাপদ মনে করে সেখানেই তারা তাদের অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলে। এই সময়ে সাইবেরিয়ান আবহাওয়া থেকে বেঁচে থাকার জন্য তারা আমাদের দেশে ছুটে এলেও এক শ্রেণীর মুনাফালোভী অমানুষ ব্যক্তির লোভের কাছে প্রায় সময়েই এরা অসহায়বোধ করে। জাল দিয়ে বিভিন্ন ফাঁদ পেতে এ সকল পাখিকে কেউ কেউ শিকার করছে। তবে, মানুষের সচেতনতা এবং প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে অবৈধ পাখি শিকারিদের উৎপাত আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এসব পাখি শুধু আমাদের হাওর জনপদের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়ও এ সকল পাখি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বিদেশ থেকে ছুটে আসা এই পাখিকূলের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা সকলের দায়িত্ব।
জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, পরিযায়ী পাখির নিরাপত্তা বিধানে প্রশাসন সজাগ রয়েছে। সবগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।