আমজাদ হোসেন মন্টু, নলডাঙ্গা থেকে:
সকালে কন্যা সন্তানের জন্মগ্রহণ আর দুপুরেই নামকরণ এবং বিকেলেই ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে শিশু সন্তানের জন্মনিবন্ধন করলেন রুস্তম আলী (৪৫) নামে এক ভ্যান চালক। একই সঙ্গে পেলেন ২০০ টাকার নগদ অর্থ পুরস্কার ও অভিনন্দনপত্র। শিশুদের জন্ম নিবন্ধনে উৎসাহিত করতে এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ নেন নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রক্ষ্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বাবু। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তার পরিষদে জন্ম নিবন্ধন করতে আসা ভ্যান চালক ক্ষুদ্র বাড়িয়া হাটি গ্রামের রুস্তম আলীর হাতে জন্ম নিবন্ধনের কার্ড ও নগদ অর্থ তুলে দেন চেয়ারম্যান। এসময় ইউপি সচিব নজমুল ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টিকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। একই সঙ্গে এমন ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ডের জন্য চেয়ারম্যানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। ভ্যান চালক রুস্তম আলী জানান, লোক মুখে শুনেছেন। সন্তান জন্মগ্রহনের দিন অথবা দুই-একদিনের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মনিবন্ধন করলে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়। তাই আজ (গত বৃহস্পতিবার) সকালে তার কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে দুপুরের মধ্যেই স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নাম রাখেন জান্নাতুল আক্তার রোজা। পরে বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে শিশুর জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। এসময় চেয়ারম্যান তার শিশুর জন্ম নিবন্ধন শেষে কার্ড, অভিনন্দনপত্র আর পুরস্কার হিসাবে নগদ ২০০ টাকা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগের কারণে শিশু জন্মনিবন্ধন কাজে উৎসাহ পেয়েছেন। তার আগের শিশুরও জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন তিনি। ব্রক্ষ্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বাবু জানান, তার ইউনিয়নে শতভাগ জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বাস্তবায়নে এবং জনসাধারণকে জন্মনিবন্ধনে উৎসাহিত করতে চলতি বছরের শুরুতে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ২/১ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করলেই বাবা-মাকে উপহার দেওয়া হবে। তার এই উদ্যোগে জন্ম নিবন্ধনে অনেকটা সাড়া পড়েছে। সন্তান জন্মগ্রহণ করলেই সঙ্গে সঙ্গে নাম রেখে বাবা অথবা মা পরিষদে চলে আসেন আসেন জন্ম নিবন্ধন করতে। ধনী-গরীব বিবেচনায় নয়, যারাই সঠিক সময়ে শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করেন। তাদেরই দেওয়া হয় নগদ অর্থ, শাড়ি-লঙ্গিসহ নানা উপকরণ। ফলে গত ৫ মাসে অন্তত শতাধিক শিশুর জন্ম নিবন্ধন হয়েছে যথা সময়ে। সাধারন মানুষের মধ্যেও বেশ উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। তিনি এই ধারা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নাটোর স্থানীয় সরকার বিভাগের (ডিডিএলজি) উপ-পরিচালক মো. গোলাম রাব্বী বলেন, চেয়ারম্যানের এই ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। কেননা প্রতিটি শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা একটি অত্যাবশকীয় কাজ। কারন জন্মনিবন্ধন হচ্ছে নাগরিকের প্রথম পরিচয় ও স্বীকৃতি। তাই সন্তান জন্মগ্রহণের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করেছেন সরকার। এ ছাড়া অনেক সরকারি সুযোগ-সুবিধায় জন্ম নিবন্ধন কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই এই কাজে উৎসাহ যোগাতে চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগ মানুষকে অনুপ্রানিত করবে এবং জন্ম নিবন্ধনে ইতোমধ্যে ব্রক্ষ্মপুর ইউনিয়নে অনেকটা সাড়া ফেলেছে। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া সারা জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য নাটোর জেলা বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান এবং জেলার মধ্যে নলডাঙ্গা উপজেলা প্রথম স্থানে রয়েছে।