আব্দুল বাশির, গোমস্তাপুর থেকে:
ছয় বছর ধরে শিকলে বাধা আবিরের জীবন। যে বয়সে হাতে বই-খাতা ও পায়ে বল বা অন্য কোনো খেলার সামগ্রী থাকার কথা, সে বয়সে হাতে কিছু পরানো না থাকলেও আবিরের পায়ে ও জানালায় ঝুলছে শিকলবিন্দ ২টি তালা। মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তার এ অবস্থা। তার ভালো নাম জালাল করিম ওরফে আবির, বয়স ১৬ বছর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌর রহমতপাড়া মহল্লার মাজহারুল করিমের ছোট ছেলে। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করতে পারছে না পরিবারটি। আবিরের বাবা মাজাহারুল করিম বলেন, ২০১৫ সালের দিকে তার মাথার সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যার কারণে অনেক ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তার এ অবস্থা দেখে পরিবারের লোকজন দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যায়। স্থানীয়ভাবে তার চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু তার রোগ ভালো হচ্ছে না। পরে উন্নত চিকিৎসা জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে দীর্ঘদিন থেকে চিকিৎসায় করিয়ে তার রোগ ভালো করতে পারছেন না। ২০১৯ সালে বাড়ির কাউকে না বলে আবির নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। অনেকদিন পর তার মেজো ছেলে আলো ঢাকার একটি স্থানে দেখতে পেয়ে বাড়ি নিয়ে আসে। কথা-বার্তার আচরণে ভিন্নতা লক্ষ্য করে পরিবার। এখন অর্থ সংকটের কারণে তার পক্ষে আর চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে। ছেলের অবস্থা করুণ। তিনি বর্তমানে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অর্থাহারে-অনাহারে জীবন যাপন করছে তার সংসার। বড় ও মেজো ছেলে বাইরে কাজ করে যে অর্থ দেয় তা দিয়ে সংসার চলে না। কি করবে ভেবে চিন্তে অস্থির হয়ে পড়েছে? নিজের বসতবাড়ি ছাড়া আর কোনো জমি নেই। কি করে ছেলের চিকিৎসা করাবো? এর আগে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দ্বারস্থ হয়ে কোনো সহযোগিতা পাননি। এ ছাড়া উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতরে ছেলের চিকিৎসা জন্য কাগজপত্রসহ সাহায্যের আবেদন জমা দেওয়া আছে। অথচ এখনও ওই দফতরের সহযোগিতার আশ্বাস মিলেনি। আবিরের মা জাহানারা বেগম বলেন, তারা নিরুপায়, সম্মান ও চক্ষু লজ্জার ভয়ে তারা প্রকাশ্যে কারো কাছে হাত বাড়াতে পারছে না। গোপনে অনেকের কাছে হাত বাড়ালেও তেমন সাড়া মেলে না। বসতভিটা ছাড়া সম্পদ বলতে তাদের আর কিছুই নেই। তার স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বাড়িতে দিনযাপন করছেন। ছেলেরা সংসারের তেমন খরচ বহন করতে পারছে না। ছোট ছেলে আবির দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। অর্থ সংকটে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। যদি কোনো হ্নদয়বান ব্যক্তি একটু চোখ তুলে দেখতো, তবে তার ছেলেটার চিকিৎসা করে সুস্থতা ফিরে আসতো। প্রতিবেশী নূর মোহাম্মদ বলেন, আবির ছেলেটি দীর্ঘদিন ধরে ভারসাম্যহীন হয়ে বাড়িতে পড়ে আছে। বাড়িতে বিভিন্ন সময় ভয়ঙ্কর আচরণ করে থাকে। তার আচরণে পিতা-মাতাসহ পরিবারের লোকজন ভীতস্থ হয়। প্রতিবেশীরা পাশে গিয়ে তার পিতা-মাতাকে শান্তনা দেয়। এখন পরিবারটি দারিদ্র্যতার মধ্যে জীবন-যাপন করছেন। আবির ও পরিবারটির পাশে কেউ দাঁড়ালে নিশ্চয় ছেলেটি সুস্থ হয়ে উঠবে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম সিরাজ বলেন, আবির ছেলেটি অনেকদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছেন। তার পরিবার কথনও সহযোগিতার জন্য তাকে বলেনি। যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবেন। তিনি আরও জানান, এ পরিবারটি অন্যের কাছে অর্থ নিতে সংকোচ বোধ মনে করেন। গোমস্তাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, তার আবেদনটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে চিঠি আসলে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে অনেকে ধারণা করছে উন্নত সুচিকিৎসা দিলে আবির সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু কে দেখে সেই অমানবিক ও করুণ দৃশ্য? কে এগিয়ে যায় সেই শিকলবন্দি শিশু আবিরের পাশে? কেই-বা রাখে তার খোঁজ?