খন্দকার আনিসুর রহমান, সাতক্ষীরা থেকে : সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলা একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারকারী নদী ইছামতি নদীর ধার ঘেষে দেবহাটা উপজেলার অবস্থান। ইছামতির ওপারে রয়েছে ভারতের হাসনাবাদ রেলষ্টেশন। যার কারণে সে সময়ে এ অঞ্চলের মানুষের দ্বিতীয় ঠিকানা ছিল কোলকাতা শহর। তারা অনায়াসেই রেলে করে কোলকাতা যেতে পারতেন। এই দেবহাটার সুশীলগাতী গ্রামে রয়েছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. বিধান চন্দ্র রায়ের বাড়ি, টাউনশ্রীপুরে রয়েছে ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শংকর রায় চৌধুরীর পৈত্রিক নিবাস। এ ছাড়া এখানে ছিল ১৮ জন জমিদার ও গাঁতিদারের বসবাস। এই দেবহাটার নামকরণ নিয়ে কেউ বলেন, প্রাচীনকালে এখানে দেব-দেবীর হাট বসতো, সেজন্য নাম হয়েছে দেবহাটা। আবার কেউ বলেন, প্রাচীনকালে এখানে ঘন জঙ্গল ছিল। সেই জঙ্গলে বিভিন্ন বনদস্যু বা অনেকে রাগারাগি করে যেয়ে পালিয়ে থাকতো। তারা বলত ওই জঙ্গলে দেবো–হাটা। আর কালের আবর্তে সেখান থেকে নাম হয়েছে দেবহাটা। তবে এই দেবহাটাকে ঘিরে একদিকে যেমন রয়েছে নানারকম কল্পকাহিনী ঠিক তেমনি রয়েছে অনেক প্রাচীন র্কীতি বা নিদর্শন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৮৬৭ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে দেবহাটার টাউনশ্রীপুরে পৌরসভা গড়ে উঠেছিল। যার নাম ছিল দেবহাটা পৌরসভা। ওই সময় বর্তমান বিভাগীয় শহর খুলনাতেও পৌরসভা গড়ে ওঠেনি। সেই পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন দেবহাটা সদরের বাসিন্দা স্বনামধন্য ও প্রজাহিতৈষী জমিদার ফনীভ‚ষন মন্ডল। যিনি একটানা ত্রিশ বছর পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মানুষের কল্যাণার্থে ও সেবার মনোভাব নিয়ে অনেক স্থাপনা তৈরি করে গেছেন। তার মধ্যে আছে দেবহাটা পাইলট হাইস্কুল (বর্তমানে সরকারি বিবিএমপি ইনষ্টিটিউশান হাইস্কুল), থানার পাশে ফনীভ‚ষনের মা ভ‚বন মোহিনীর নামে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিক (যেটি বর্তমানে সাব সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়) সহ অসংখ্যা কল্যাণকর স্থাপনা।
টাউনশ্রীপুরে রয়েছে ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শংকর রায়ের পৈত্রিক ভিটাবাড়ি। তিনি সেনাপ্রধান থাকাকালে ১৯৯৭ সালে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে টাউনশ্রীপুর এসে পৌত্রিক ভিটাটি দেখে গেছেন। আর সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন সেখানের কিছু মাটি। সুশীলগাতী গ্রামে রয়েছে ডা. বিধান চন্দ্র রায়ের পৈত্রিক ভিটাবাড়ি। সেখানে একটি নামফলক করা আছে। দেবহাটা ও টাউনশ্রীপুরে এখন আর জমিদারদের বসবাস না থাকলেও রয়েছে তাদের বিশাল অট্টালিকা, ধর্মীয় উপসনালয়, থিয়েটার রুম সহ কিছু কারুকার্য। তবে সেখানে আর বাজেনা কোনো বাজনা ও বা হয় না কোনো নৃত্য। ব্রিটিশ শাসনামলেই সেই আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলো এখন হয়েছে পিচ ঢালা রাস্তা। যেটা যেয়ে মিশেছে জেলা শহরের সঙ্গে। তাই দেবহাটার ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি কিছু উদ্যোগ। পাকিস্তান সরকার আসার পরে ১৯৫০-৫১ (এলাকাবাসীর ধারনা মতে) সালে দেবহাটা পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে। পাকিস্তান সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৎকালীর রাওয়ালপিন্ডি হাইকোর্টে দেবহাটার জমিদার অনীল স্বর্ণকার মামলা করেছিলেন। কিন্তু র্দুভাগ্যক্রমে আর পৌরসভা ফিরে আসেনি। তাই দেবহাটাবাসী ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষী এই দেবহাটাতে আবারো পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।