যশোর সদর উপজেলার হামিদপুর এলাকার এক পিতা অভিযোগ করেছেন যে, তার একমাত্র পুত্র ভয়-ভীতি ও প্রভাব খাটিয়ে তার নামে জমির হেবা (উপহার) দলিল করিয়ে নিয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি উক্ত দলিলের নামজারি স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি), যশোর সদর বরাবর।
জানা গেছে, হামিদপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আজাহার আলী বিশ্বাস (পিতা মৃত আ. হাকিম বিশ্বাস) ২১ অক্টোবর ২০২৫ ইং তারিখে এক লিখিত আবেদনের মাধ্যমে এ অভিযোগ দাখিল করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, যশোর কোতয়ালী উপজেলার ৮৬ নং হামিদপুর মৌজায় অবস্থিত তার পৈত্রিক সম্পত্তির এস.এ রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন তার পিতা আ. হাকিম বিশ্বাস। পিতার মৃত্যুর পর আজাহার আলী বিশ্বাস পৈত্রিক ওয়ারিশ হিসেবে স্বত্বপ্রাপ্ত হন এবং আর.এস খতিয়ান নং ৭৩ ও ৭৪-এ যথাক্রমে ২০ শতক ও ৬৮.২৫ শতক জমি নিজের নামে রেকর্ড করান।
তিনি অভিযোগ করেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিতে ভোগদখলে আছি। কিন্তু সম্প্রতি আমার একমাত্র পুত্র আবু আল নোমান আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে এবং ভয়-ভীতি দেখিয়ে গত ২৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে জোরপূর্বক ৪২.৭৫ শতক জমির হেবা (উপহার) দলিল (দলিল নং–১১৫৮৩) নিজের নামে করিয়ে নেয়।”
আজাহার আলী বিশ্বাস আরও জানান, তাকে জোর করে দলিলে স্বাক্ষর করানো হয়। বর্তমানে তার পরিবারের সদস্যরা হলেন— একমাত্র পুত্র আবু আল নোমান, দুই কন্যা আসমা খাতুন ও রুমা খাতুন এবং স্ত্রী জরিনা বেগম। তিনি বলেন, “আমি জীবিত থাকা অবস্থায় কাউকেই আমার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চাই না। তাই উক্ত দলিলের বিরুদ্ধে আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবং আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ জারি করেছি।”
ভুক্তভোগী আজাহার আলী বিশ্বাস বলেন, “আমি বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করেছি। আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয়ভাবে শালিসি বিচারও বসিয়েছিলাম। কিন্তু তাতেও সে (আমার পুত্র) আমার জমি ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়নি। বরং সে আমাকে নানাভাবে ভয় দেখাতে শুরু করেছে। বলেছে, ‘আমার আর্মিতে বড় অফিসার বন্ধু আছে, কোর্টের বিচারকদের চিনি—তোকে দেখে নেব।’ এসব কথা বলে এখন সে আমাকে নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত আবু আল নোমান অতীতেও একাধিক হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবু আল নোমান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি প্রায় তিন-চার মাস আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানা যায়। বর্তমানে তিনি যশোর হামিদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পিয়ন পদে চাকরিরত আছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আবু আল নোমানের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন মো. পারভেজ হোসেন (পিতা মো. জাকির হোসেন, গ্রাম সীতারামপুর–রাজারহাট) এবং খসরুজ্জামান দিপু (পিতা খায়ের গাজী, গ্রাম হামিদপুর)। তারা একত্রে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে আজাহার আলী বিশ্বাসকে জোরপূর্বক সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নিয়ে গিয়ে উক্ত হেবা (উপহার) দলিলে স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করেন।
আজাহার আলী বিশ্বাস আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “দলিলটি যদি বর্তমানে নামজারি হয়ে যায়, তবে আমি চরম সমস্যায় পড়ব।”
এ বিষয়ে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি), যশোর সদর বরাবর আবেদন করে অনুরোধ জানিয়েছেন— “উক্ত দলিলের বিষয়ে আইনগত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেন নামজারি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।”
স্থানীয়দের দাবি, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বৃদ্ধ পিতার প্রতি পুত্রের এমন আচরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।