নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত হত্যা সহ পাঁচ মামলায় সাবেক সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার দেখাতে পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে পৃথক দুʼটি আদালতে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক কাইউম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ফতুল্লা থানার চারটি হত্যা মামলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সেলিনা খাতুন এবং সদর থানার সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার মামলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মাইমানাহ আক্তার মনির আদালতে শুনানি হয়।
শুনানি চলাকালীন কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন অভিযুক্ত সাবেক সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
গত বৃহস্পতিবার মামলাগুলোর শুনানি হবার কথা থাকলোও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের “লকডাউন” কর্মসূচির কারণে তা পেছানো হয়।
গত ৯ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আইভী গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে রয়েছেন। পরে আরও চারটি মামলায় তাকে “শ্যোন অ্যারেস্ট” দেখায় পুলিশ।
গত ৯ নভেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আইভীকে পাঁচটি মামলায় জামিন দেন।
ওইদিনই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ তাদের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আদালতে আবেদন করে। পরদিন ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় আরও চারটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন করে।
তবে, এসব মামলার এজাহারে আইভীর নাম নেই।
এদিকে, পাঁচ মামলায় আইভীকে জামিন দিয়ে হাই কোর্টের আদেশ গত বুধবার স্থগিত করে দিয়েছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
আদালতে আইভীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আওলাদ হোসেন।তিনি বলেন,এসব মামলায় আইভী আসামি নন, কোথাও তার নাম নেই।তাছাড়া গ্রেফতারকৃতদের কেউ তার জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিও দেননি। আইভী হাইকোর্টে পাঁচটি মামলায় জামিন পেয়েছিলেন, কেবলমাত্র তার কারামুক্তি বিলম্বিত করতেই পুলিশ তড়িঘড়ি করে নতুন ৫টি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন করে।
এ ব্যাপারে তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান।
বাস চালক আবুল হোসেন মিজি, আব্দুর রহমান, মো. ইয়াছিন ও পারভেজ হত্যা মামলায় আইভী কে নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ফতুল্লা মডেল থানায় চারটি মামলা দায়ের করেন। অপর মামলাটি সদর মডেল থানায় পুলিশের দায়ের করা।
মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাস চালক আবুল হোসেন মিজি (৩২)। পরে ২১ আগস্ট হত্যা মামলা করেন নিহতের মা সাহিদা বেগম।
একইদিন দেলপাড়া এলাকায় গুলিতে মারা যান ১৮ বছর বয়সী মো. ইয়াছিন। তার ভাই মো. সিপন ২৮ আগস্ট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওইদিন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের ভূঁইগড় এলাকায় মারা যান পারভেজ। ২৩ বছর বয়সী এ যুবকের মাথায় গুলি লাগে। তার বাবা সোহরাব মিয়া ২২ আগস্ট থানায় মামলা করেন।
একই এলাকায় ২২ জুলাই গুলিতে মারা যান আব্দুর রহমান (৬৬)। পরে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন তার ছেলে মো. ফয়সাল।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৮ মে রাতে নগরীর দেওভোগে আইভীর বাসভবন “চুনকা কুটিরে” অভিযান চালায় পুলিশ। এলাকাবাসীর বাধায় রাতভর ওই বাড়িতেই অবস্থান করে পুলিশ। পরে সকালে আইভী স্বেচ্ছায় পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। পথিমধ্যে বঙ্গবন্ধু সড়কের কালিরবাজার মোড়ে আইভীকে বহন করা পুলিশের গাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ে স্থানীয় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
পরে ১২ মে রাতে এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে, যেখানে আইভীর সমর্থক আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়। এ মামলায় স্থানীয় এক সংবাদকর্মী ও তার পরিবারের দু’জন সদস্যও গ্রেপ্তার হন।