বাজারে খাদ্যপণ্যে ব্যবহারের উপযোগী দাবি করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ‘গোলাপজল’ ও ‘কেওড়া জল’ নামক সুগন্ধি বিক্রি বাড়ছে। লেবেলে ‘খাবার উপযোগী’, ‘ফুড গ্রেড’, ‘খাদ্য আইন অনুসরণ করে প্রস্তুত’, এমনকি ভেজিটেরিয়ান খাদ্য নির্দেশক সবুজ চিহ্ন ব্যবহার করে এগুলোকে নিরাপদ বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এসব দাবির পেছনে রয়েছে বড় ধরনের বিভ্রান্তি ও জনস্বাস্থ্যঝুঁকি—এমনই সতর্কতা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি বাজারে পাওয়া পণ্যের লেবেল পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বহু গোলাপজল ও কেওড়া জলের বোতলে উপাদান হিসেবে শুধু “বিশুদ্ধ পানি” ও “গোলাপ/কেওড়া ফ্লেভার” বা কেবল “ফ্লেভার (Flavour)” লেখা রয়েছে। এতে বোঝার উপায় নেই সুগন্ধি তৈরিতে ঠিক কী ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্রেতা ও খাদ্য ব্যবসায়ীদের মাঝে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি।
খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ২০১৩-এর ২৭ ও ৩২ ধারায় বলা আছে—খাদ্যে অননুমোদিত সংযোজন দ্রব্য ব্যবহার কিংবা সঠিক লেবেলিং না করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে গোলাপজল ও কেওড়া জল উৎপাদনকারী কয়েকটি কারখানায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দেখা গেছে উদ্বেগজনক তথ্য। এসব কারখানায় অনুমোদনহীন রাসায়নিক—এমনকি কিডনি ডায়ালাইসিসে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ পর্যন্ত মিশিয়ে সুগন্ধি প্রস্তুত করা হচ্ছিল।
গোলাপজল তৈরিতে ব্যবহৃত অননুমোদিত কেমিক্যাল এবং কেওড়া জলে মেশানো ডায়ালাইসিস দ্রব্য জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
এমতাবস্থায় ‘মোড়কাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা, ২০১৭’ অনুযায়ী যেসব সুগন্ধির লেবেলে ‘অনুমোদিত প্রাকৃতিক’, ‘অনুমোদিত কৃত্রিম’ বা ‘অনুমোদিত প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম’ সুগন্ধি—এ ধরনের অভিব্যক্তি স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই এবং কৃত্রিম সুগন্ধিতে ব্যবহৃত দ্রব্যের সাধারণ নাম ও ইনডেক্স (INS) নম্বর দেয়া নেই—এমন পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ থেকে বিরত থাকার জন্য সকল প্রস্তুতকারককে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া রেস্টুরেন্ট, বেকারি, কমিউনিটি সেন্টার, ক্যাটারিং সার্ভিসসহ সব ধরনের খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে—অপ্রমাণিত ও ভুল লেবেলযুক্ত সুগন্ধি কোনোভাবেই খাবারে ব্যবহার করা যাবে না।
সাধারণ ভোক্তাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, যথাযথ লেবেলিং ছাড়া কোনো ধরনের গোলাপজল বা কেওড়া জল খাদ্যে ব্যবহার বা ক্রয় থেকে বিরত থাকতে হবে। সুগন্ধির নামে ভেজাল রাসায়নিক যেন আপনার খাবারে না পৌঁছায়—তা নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।