বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
বেতন বকেয়ার দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ বোয়ালখালীতে পলাতক ইউপি চেয়ারম্যান কাজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে এসি ল্যান্ড অসুস্থ বাবার জমি হেবা দলিল করে নিলেন ছেলে, নামজারি স্থগিতের আবেদন রাজাপুরে মামলা প্রত্যাহার করে সাবেক ইউপি সদস্য’র মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন জামালপুরে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হতে চান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, স্থানীয়দের প্রশ্ন ১৭ বছর কোথায় ছিলেন তিনি উপজেলা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত নবীনগরে তারুণ্যের উৎসবে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বীজ বিতরণ কুড়িগ্রাম-৪ আসনে ভোটের মাঠে জোয়ার তুলেছেন বিএনপি নেত্রী মমতাজ হোসেন লিপি কিশোরগঞ্জে মাদক মালার সাজাপ্রাপ্ত আসামী আটক স্কাউটস সার্বিক শিক্ষায় অবদান রাখছে- সহ: কমিশনার জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের গভীর ষড়যন্ত্র চলছে: আব্দুস সালাম সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দেশেই উৎপাদন হবে বালাইনাশক শ্রীপুরে পথচারীদের মুখে হাসি ফোটাতে হাসান হাবীবের উদ্যোগ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর : বি এম মিজানুল হাসান সাতক্ষীরায় জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে হেলমেট বিতরণ ও সচেতনতা সভা খাগড়াছড়ি থেকে ইমন হত্যা মামলার দুই আসামি গ্রেফতার রাজাপুরের বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বিএসপি’র যুগ্ম মহাসচিব হলেন মোঃ ইব্রাহিম মিয়া মুরাদনগরে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে নান্দাইলে র‍্যালী ও পথ-সভা অনুষ্ঠিত লালমোহনে নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত পটুয়াখালীর আলোচিত লামিয়া ধর্ষণ মামলায় তিন আসামির দণ্ড পাইকগাছায় জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার নির্বাহী কমিটির শপথ গ্রহন অনুষ্ঠিত  বন্দরে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত মধুখালীতে লাল শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা সখীপুরে আগুনে পুড়ে ছাই সৌদি প্রবাসী লাবু মিয়ার স্বপ্ন গোয়াইনঘাটে ৫৩০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে সালনা হাইওয়ে থানার র‍্যালি ও পথসভা ময়মনসিংহে নান্দাইল থানার হত্যা মামলার ২ জন অভিযুক্ত সিপিএসসি, র‌্যাব-১৪, ময়মনসিংহ কর্তৃক গ্রেফতার

বাংলাদেশে সেল ও জিন থেরাপি: চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত

ডা. এম. মুর্শেদ জামান মিঞা
মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫, ৯:২৪ অপরাহ্ন

চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন বিপ্লব
বিশ্ব চিকিৎসাবিজ্ঞানে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো সেল থেরাপি (Cell Therapy), জিন থেরাপি (Gene Therapy) এবং রিজেনারেটিভ মেডিসিন (Regenerative Medicine)। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার, রক্তরোগ, জিনগত অসুখ কিংবা অবক্ষয়জনিত রোগে ভুগতে থাকা মানুষদের জন্য এগুলো আশার আলো হয়ে উঠেছে।
প্রচলিত চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রেই শুধু রোগ নিয়ন্ত্রণ করে, স্থায়ী সমাধান দিতে পারে না। অথচ CAR-T সেল থেরাপি (ক্যান্সারের জন্য), Gene Editing Therapy (থ্যালাসেমিয়া বা হিমোফিলিয়ার জন্য), কিংবা Stem Cell Therapy (হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা স্নায়বিক রোগের জন্য) রোগ নিরাময়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিতে সক্ষম হচ্ছে।
চীনের সাফল্য: অনুকরণীয় মডেল
সম্প্রতি চীনের Institute of Hematology and Blood Diseases Hospital (IHCAMS) এবং Haihe Laboratory of Cell Ecosystem (Tianjin) ঘুরে দেখা গেছে, তারা কীভাবে রাষ্ট্রীয় নীতি, গবেষণা কেন্দ্র, আধুনিক ল্যাবরেটরি এবং শিল্পখাতকে একত্র করে এক অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো:
•২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চীন ১৯টি Investigational New Drug (IND) Clinical Trial অনুমোদন পেয়েছে।
•২০২৩ সালে অনুমোদিত হয়েছে চীনের প্রথম CAR-T সেল থেরাপি পণ্য (CNCT19) লিউকেমিয়ার চিকিৎসায়।
•হিমোফিলিয়ার জন্য প্রথম জিন থেরাপি অনুমোদিত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ১০০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা পেয়েছেন।
•β-থ্যালাসেমিয়ার জন্য CRISPR-Cas9 ভিত্তিক জিন এডিটিং থেরাপি-তে রোগীরা চার বছরের বেশি সময় ধরে ক্লিনিক্যাল রেমিশনে আছেন।
•বর্তমানে তারা বছরে প্রায় ৩ লাখ রোগীকে রক্তরোগ সংক্রান্ত বিশেষায়িত চিকিৎসা দিচ্ছে।
এমন একটি সমন্বিত ব্যবস্থা দেখিয়ে দিয়েছে—রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা, গবেষণা ও শিল্প একসাথে এগোলে কীভাবে চিকিৎসা খাতে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সম্ভব।
বাংলাদেশের বাস্তবতা
বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, লিউকেমিয়া, মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম (MDS) এর মতো রক্তরোগ ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু এসব জটিল রোগ নিয়ে জন্ম নিচ্ছে।
বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো হলো:
•দেশে এখনো GMP (Good Manufacturing Practice) ল্যাবরেটরি বা ক্লিনিক্যাল গ্রেড সেল কালচার সুবিধা নেই।
•পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত মলিকিউলার বায়োলজিস্ট, জেনেটিসিস্ট ও সেল থেরাপি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।
•জিন থেরাপি বা সেল থেরাপি পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি ও আইনগত কাঠামো অনুপস্থিত।
•রোগীদের বিদেশে চিকিৎসা নিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
•সাধারণ মানুষ এসব আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন নয়।
বাংলাদেশে করণীয়
বাংলাদেশও চাইলে আগামী ১০ বছরে ধাপে ধাপে সেল ও জিন থেরাপি চালু করতে পারে। এজন্য নিম্নলিখিত উদ্যোগগুলো নেওয়া জরুরি—
১. জাতীয় সেল ও জিন থেরাপি গবেষণা কেন্দ্র
ঢাকা বা রাজশাহীতে Center of Excellence for Hematology & Gene Therapy প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
এখানে থাকবে:
•Stem Cell Bank
•Gene Editing Research Unit
•Clinical Trial Facility
•Translational Medicine Department
২. গবেষণা ও উৎপাদন সুবিধা (GMP Facility)
প্রথম ধাপে MSC (Mesenchymal Stem Cell) উৎপাদন ল্যাব শুরু করা যেতে পারে।
পরবর্তী ধাপে CAR-T Cell Production এবং Gene Editing (CRISPR-Cas9) সুবিধা চালু করা জরুরি।
৩. অগ্রাধিকার ভিত্তিক রোগসমূহ
•রক্তরোগ: লিউকেমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া
•অসংক্রামক রোগ: হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক
•অবক্ষয়জনিত রোগ: পারকিনসনস ডিজিজ, আলঝেইমারস
৪. মানবসম্পদ উন্নয়ন
•চিকিৎসক, বিজ্ঞানী ও টেকনোলজিস্টদের জন্য ফেলোশিপ ও হ্যান্ডস-অন ট্রেনিং শুরু করা।
•বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে MoU করে যৌথ গবেষণা চালানো।
•মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে Cell & Gene Therapy Specialization চালু করা।
৫. সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ
•সরকারি বাজেটের পাশাপাশি ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ও প্রাইভেট ভেঞ্চার ক্যাপিটাল যুক্ত করা।
•WHO, World Bank ও ADB-এর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
৬. নীতি ও আইনগত কাঠামো
•National Cell and Gene Therapy Policy 2030 প্রণয়ন করতে হবে।
•নৈতিক অনুমোদন, রোগীর সুরক্ষা, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যবেক্ষণের জন্য পৃথক নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা জরুরি।
সম্ভাব্য সুফল
যদি এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়, তাহলে—
1.বাংলাদেশের থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া ও লিউকেমিয়ার রোগীরা দেশে উন্নত চিকিৎসা পাবেন।
2.রোগীদের বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হবে না, অর্থ সাশ্রয় হবে।
3.বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় Cell and Gene Therapy Hub হয়ে উঠতে পারবে।
4.নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বায়োটেকনোলজি ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প বিকাশ লাভ করবে।
5.স্বাস্থ্যব্যবস্থা হবে Precision Medicine এবং Personalized Therapy-ভিত্তিক।
উপসংহার
চীন দেখিয়ে দিয়েছে—রাষ্ট্রীয় নীতি, গবেষণা ও শিল্প একসাথে কাজ করলে Cell & Gene Therapy স্বল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বাংলাদেশও একই ধারা অনুসরণ করতে পারে।
আমাদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী দশকের মধ্যেই বাংলাদেশে CAR-T Therapy, Gene Editing, Stem Cell Transplantation এবং Personalized Medicine চালু করা সম্পূর্ণ সম্ভব। এটি শুধু চিকিৎসার নতুন দিগন্তই নয়, বরং দেশের জন্য স্বাস্থ্যখাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হবে।
✍️  সহকারী অধ্যাপক, হেমাটোলজি বিভাগ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।


এই বিভাগের আরো খবর