সাফিনাতুন জাহান সাবরিন, ঢাকাপ্রতিদিন : দেশজুড়ে চলছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন। এরমধ্যে আসছে নতুন বছর। আর নতুন বছর মানেই শহরাঞ্চলে বাড়িওয়ালাদের এক দফা বাড়িভাড়া বাড়ানোর অলিখিত নিয়ম। এবছরও ইতোমধ্যে অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়া বৃদ্ধির নোটিস দিয়েছেন। তবে ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনোরকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না বাড়িওয়ালারা। তাই নতুন বছরের শুরুতেই ভাড়াটিয়াদের পড়তে হয় অনিয়মতান্ত্রিক বাড়িভাড়ার কবলে। লাগামহীন বাড়িভাড়ার বৃদ্ধির ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নিম্ন-মধ্যবিত্তদের।
বর্তমানে প্রতিদিন বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। ব্যয় বাড়লেও বাড়ছে না আয়। তার ওপর অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে দেশ। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখে গুটিয়ে নিচ্ছে ব্যবসা। সংকটের মুখে কর্মী ছাটাই করতেও বাধ্য হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। একদিকে চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে পরিবারের একমাত্র জীবিকা নির্বাহকারী অনেকেই হারাচ্ছেন চাকরি। নিম্ন-মধ্যবিত্তদের নুন আনতে যেখানে পান্তা ফুরায়, বাড়তি বাসা ভাড়া সেখানে যেন উড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কর্মসংস্থান কিংবা ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় পরিবারসহ প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ঢাকা এবং চট্টগ্রামমুখী হচ্ছেন। আর এদের ৮০ শতাংশই মানুষই থাকেন ভাড়া বাসায়। শহরাঞ্চলে ভাড়া বাসার চাহিদাকে পুঁজি করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিবছর বাড়িওয়ালারা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়ান। প্রত্যেক বছরের শুরুতেই বর্ধিত বাড়িভাড়ার বোঝা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন এসব অসহায় ভাড়াটিয়ারা।
দেশের চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে বাসাভাড়া বৃদ্ধির খবর যেন মাথায় ‘আকাশ ভেঙে পড়ার’ মতো। মুদ্রাস্ফীতির বাড়তি চাপে ইতোমধ্যে শহরাঞ্চলে টিকতে না পেরে অনেকেই পরিবারসহ ফিরে যাচ্ছে গ্রামের বাড়িতে। এদিকে বাড়িওয়ালারাও পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিসহ নানান কারণ দেখিয়ে বাসা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরিষেবার মূল্য বৃদ্ধি করা হলে অধিকাংশ বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়িয়ে পরিষেবা মূল্যের সঙ্গে তা সমন্বয় করেন। শহরাঞ্চলের নিম্ন-মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় নিয়ে সরকারের উচিত পরিষেবার মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা। সেই সঙ্গে বিশাল সংখ্যক মানুষের কথা বিবেচনা করে বাসাভাড়া আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি।
১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারার মতে, কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার অধিক ভাড়া কোনোভাবেই আদায়যোগ্য হবে না। বাড়িভাড়া বিড়ম্বনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই বাড়িভাড়া বাড়ানো, বাড়িওয়ালাদের দাপট কিংবা স্বেচ্ছাচারিতার কাছে অসহায় সাধারণ ভাড়াটিয়ারা। লাগামহীনভাবে বাসাভাড়া বৃদ্ধি রোধে প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ। এসব ভাড়াটিয়াদের সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশনকে মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিকল্প নেই। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সমস্যার সমাধান এখনই করা না গেলে আগামী দিনগুলোতে আরও অসহায় হয়ে পড়বে এসব ভাড়াটিয়া। ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটির প্রয়োগে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষ এ থেকে পরিত্রাণ পাবে না। সমাধানে দরকার সরকারের নজরদারি এবং কঠোর আইন প্রণয়ন।
ঢাকাপ্রতিদিন/এআর