ওমর ফারুক, রাজশাহী ব্যুরো:
লকডাউনের দোহাই দিয়ে রাজশাহী মহানগর ও আশেপাশের উপজেলায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী যানবাহন না থাকায় বাধ্য হয়েই দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে নিরুপায় হয়েই ভাড়া দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ। আবার এসব সিএনজি ও অটোরিক্সায় স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো তোয়াক্কা নেই। গাদাগাদি করেই তারা যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছে। গত সোমবার লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই রাজশাহী মহানগর থেকে বিভিন্ন উপজেলা ও নগরের অভ্যন্তরে রিক্সা-অটোরিক্সা চালক এবং সিএনজি চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় করছে। এ নিয়ে যাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু এ নৈরাজ্য চললেও দেখার কেউ নেই। চালকরা যা ইচ্ছা তাই ভাড়া আদায় করছে। গত সোমবার থেকে ৫০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা, ১০০ টাকার ভাড়া ১৫০ টাকা, ১২ টাকার ভাড়া ২০ টাকা এবং ৪০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। দুই দিন থেকে রিক্সা, অটোরিক্সা ও সিএনজি চালকরা লকডাউনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার লকডাউন ঘোষণার পর থেকে রাজশাহী ছাড়তে শুরু করে সাধারণ মানুষ।গত রোববার নগরজুড়ে ছিল প্রচুর যানজট। এদিন নগরের মার্কেট ও কাঁচা বাজারগুলোতেও ছিল উপচেপড়া ভিড়। এ কারণে জিনিসপত্রের দামও বেড়ে যায়। গত রোববারের পর সোমবার থেকে ৭ দিনের প্রথম দিন লকডাউন শুরু হয়। প্রথম দিনেই নগর জীবন প্রায় স্বাভাবিক ছিল। অটোরিক্সা, রিক্সা ও অন্যান্য ছোটখাট যানবাহন এবং প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। লকডাউনের মধ্যেও যারা শিক্ষানগরী রাজশাহীতে প্রবেশ করছেন বা নগর ছেড়ে প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছেন, তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। শুধু নগরের বাইরের জেলা-উপজেলাতেই নয় নগরের অভ্যন্তরেও ভাড়া নিয়ে তেলেসমাতি করছেন চালকরা। বিভিন্ন রুটে ভাড়া বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। আর রিক্সা চালকরা সুযোগ বুঝে আরও বেশি ভাড়া আদায় করছে।
গত মঙ্গলবার বিকেল রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম রেলগেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিপুল সিএনজি ও অটোরিক্সা যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে। রেলগেট থেকে তানোর, মোহনপুর, কেশরহাট, ভবানিগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, নওহাটা, বায়া যাওয়া যায়। অপরদিকে অটোরিক্সা ও রিক্সায় করে নগরের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া যায়। সেখানে খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, রেলগেট থেকে তানোর সিএনজিতে ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত সোমবার থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। মোহনগঞ্জ ছিল ৫০ টাকা সেখানে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। আর রেলগেট থেকে ভবানিগঞ্জ ৮০ থেকে আগে ১০০ টাকা নেওয়া হলেও এখন ১৫০ টাকা। তাহেরপুরের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। কেশরহাট থেকে ৪০ টাকা থেকে নেওয়া হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আর মোহনপুর নেওয়া হচ্ছে আরেকটি বেশি। এ রুট ছাড়াও তালাইমারি থেকে পুঠিয়া, চারঘাট, বাঘা ও দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। শহর থেকে গোদাগাড়ী উপজেলার ভাড়াও বেড়েছে অনেক বেশি।
রাহিম নামের এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, রেলগেট থেকে আগে যে ভাড়ায় ২ জন যাওয়া যেতো এখন একজন যাওয়ায় কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী ভাড়া না দিলে তারা বলছে, গেলে আসেন, না হলে নাই। প্রায় যাত্রীর পক্ষ থেকে ভাড়া ভাড়ার অভিযোগ রয়েছে। তারা ক্ষোভও প্রকাশ করছেন। কিন্তু বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। এতো গেল নগর থেকে বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতের ভাড়ার কথা। নগরেও অটোরিক্সা ও রিক্সা চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া বেশি আদায় করছে। রেলগেট থেকে কাশিয়াডাঙ্গা ১৫ টাকা ভাড়া হলেও নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ২২ টাকা। লক্ষীপুর ৭ টাকা হলেও দুই দিন থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন রুটে অটোরিক্সা চালকরা ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করছে বলে যাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে। সিয়াম নামের এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, নগরে রিক্সা ও অটোরিক্সাওয়ালারাও ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য শুরু করেছে। তারাও ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। আগের ভাড়া দিতে চাইলে নিতে চাচ্ছে না। অটোর থেকে রিক্সায় আরও বেশি ভাড়া আদায় করছে বলেও যাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে।